টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে রাখুন

টনসিল আমাদের গলাতে থাকে। এই টনসিলে যখন ক্যান্সার হয়, তখন তাকে টনসিল ক্যান্সার বলে। টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী তা নিয়ে আজ আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। টনসিল ক্যান্সার হচ্ছে একটি বিরল ধরণের ক্যান্সার। টনসিল ফুলে গেলে ব্যাথা হয় যা টনসিলের ব্যাথা নামে আমরা জানি। কিন্তু, যখন ইনফেকশন হয়ে টনসিলের কোনো কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, এবং ক্যান্সার হয়, তখন তা পুরো গলায় ছড়িয়ে পড়ে। যা গলার ক্যান্সার নামেও পরিচিত।

আজকের এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি কি তা নিয়ে আলোচনা করবো। এছাড়াও, টনসিল ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কী কী করতে হবে এবং কেন টনসিল ক্যান্সার হয় তা নিয়ে আলোচনা করবো। তো চলুন, শুরু করা যাক।

টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণ
টনসিল ক্যান্সার কেন হয়

ক্যান্সার কী

ক্যান্সার হল একটি গুরুতর অসুখ যা শরীরের কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এবং বিস্তারের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ক্যান্সার কোষগুলি স্বাভাবিক কোষ থেকে আলাদা, কারণ তারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন এবং ছড়িয়ে পড়া শরীরের ক্ষতি করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ক্যান্সারের কারণে এখন অব্দি অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। ক্যান্সার হলেই এটি ধরা পড়ে না। যখন ক্যান্সার একদম শেষ পর্যায়ের দিকে চলে যায়, তখন ধরা পড়ে এবং শেষ সময়ে করার মতো আর কিছুই থাকে না।

টনসিল কী

টনসিল হল মুখে অবস্থিত দুটি ছোট, গোলাকার ভাঁজ। তারা লালা তৈরি করে এবং ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের মতো ক্ষতিকারক জীবাণুগুলিকে দূর করতে সাহায্য করে। টনসিলগুলি গলার পিছনের দিকে অবস্থিত, টনসিলার রিং নামে পরিচিত একটি গোলাকার গঠনে। টনসিলার রিংটি শ্বাসনালী এবং খাদ্যনালীকে ঘিরে থাকে।

টনসিলগুলো আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা শরীরে প্রবেশকারী ক্ষতিকারক জীবাণুগুলিকে ধরতে এবং ধ্বংস করতে সাহায্য করে। টনসিলগুলি যখন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়, তখন টনসিলাইটিস নামে একটি অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। টনসিলাইটিস হল একটি সাধারণ অবস্থা যা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। টনসিলাইটিসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে গলা ব্যথা, জ্বর, এবং লাল এবং ফোলা টনসিল। টনসিলাইটিস ভাইরাসের কারণে টনসিল ফোলা এবং টনসিল ব্যাথা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন – ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী এবং চিকিৎসা কী

টনসিলাইটিস হলে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। টনসিলাইটিসের গুরুতর ক্ষেত্রে, টনসিলগুলিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয়। টনসিলগুলি সরানোর অস্ত্রোপচারকে টনসিলেকটমি বলা হয়। কিন্তু, যখন টনসিলে বাড়তি কোষ সৃষ্টি হয় এবং ইনফেকশন হয়, তখন তাকে টনসিলের ক্যান্সার বলা হয়। টনসিলের ক্যান্সার থেকে গলার ক্যান্সার হতে পারে।

ক্যান্সার হওয়ার কারণ কী

ডিএনএ রূপান্তর এবং মিউটেশনগুলি ক্যান্সারের প্রধান কারণ। যখন কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে তখন ক্যান্সারের কারণ দেখা দেয়। তা ছাড়াও কিছু রাসায়নিকের কারণে অতিবেগুনী রশ্মি একজন ব্যক্তির ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। কিছু ক্যান্সার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি এবং ডায়েটের কারণে হতে পারে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন কিছু কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • বয়স: ক্যান্সার সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। প্রবীণ বয়সে অনেককেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। কারণ, ক্যান্সার হলেও তা সহজেই ধরা পড়ে না।
  • পারিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অর্থাৎ, আপনার পরিবারের কেউ যদি আগে থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে আপনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অঙ্কাংশে বেড়ে যাবে।
  • ধূমপান: ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ।

আরও পড়ুন – দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি কি

  • অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে কোলন এবং রেকটাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং মূত্রাশয় ক্যান্সার।
  • অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য: অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য, যেমন অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার, লাল মাংস এবং ফাস্ট ফুড খাওয়া, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: শারীরিক পরিশ্রমের অভাব বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে কোলন এবং রেকটাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার।
  • অতিরিক্ত সূর্যের সংস্পর্শ: অতিরিক্ত সূর্যের সংস্পর্শ ত্বকের ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
  • কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া: কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া, যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV), হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এবং হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV), ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

এসব কারণে মূলত ক্যান্সার হয়ে থাকে। এখন আমরা আলোচনা করবো, গলার ক্যান্সারের লক্ষণ নিয়ে। অর্থাৎ, গলার ক্যান্সার কেন হয় এসব বিষয় নিয়ে।

টনসিল ক্যান্সার হওয়ার কারণ কী

টনসিল ক্যান্সারের কারণগুলোর মাঝে সবথেকে বেশি হচ্ছে ধূমপান করা। অতিরিক্ত ধূমপান করার কারণে টনসিল ক্যান্সার হয়ে থাকে। এছাড়াও, অতিরিক্ত পরিমাণে মদ পান করলে কিংবা পুষ্টির অভাবেও টনসিল ক্যান্সার হতে পারে। টনসিল ক্যান্সার হলে অনেক লক্ষণ দেখা যায়। শরীরে অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে গলা যেহেতু অনেক বেশি সেন্সিটিভ, তাই টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণগুলো অনেক দ্রুত ধরা পড়ে। তো চলুন, টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে নেয়া যাক।

আরও পড়ুন – কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে রাখুন

টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ

টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • দীর্ঘস্থায়ী গলা ব্যথা: টনসিল ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল দীর্ঘস্থায়ী গলা ব্যথা। যদি আপনার গলা ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় বা খারাপ হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে দেখা করা জরুরী। এছাড়াও, গলা ব্যথার কারণ হিসেবে যদি দেখা যায় টনসিল ফুলে গেছে বা টনসিল ব্যাথা করছে, খাবার সময় গলায় আটকে যাচ্ছে, পানি অব্দি খেতে পারছেন না।
  • খাবার গিলতে অসুবিধা: টনসিল ক্যান্সার খাবার গিলতে অসুবিধার কারণ হতে পারে। টনসিল ফুলে গেলে খাবার খেতে বা পানি পান করতে অনেক অসুবিধা হয়। টনসিল ক্যান্সার হলেও একই সমস্যা দেখা যায়। গলায় ঝাল লাগা বা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয় টনসিল ক্যান্সার হলে।
  • কাশি: টনসিল ক্যান্সারের কারণে কাশি হতে পারে। কাশির সঙ্গে রক্ত ​​বের হতে পারে। এমন কিছু লক্ষ্য কোলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ, কাশির সঙ্গে রক্ত পড়লে তা টনসিল ক্যান্সার/গলার ক্যান্সার/ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
  • মুখ থেকে রক্তপাত: টনসিল ক্যান্সারে মুখ থেকে রক্তপাত হতে পারে। শুধু কাশির সঙ্গে রক্তপাত কিংবা কাশি ছাড়াও মুখ থেকে রক্তপাত হতে পারে টনসিল ফেটে গেলে বা টন্সিলে ক্যান্সার হলে।
  • শ্বাসকষ্ট: টনসিল ক্যান্সার শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। টনসিল ফুলে গেলে গলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। একারণে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
  • ওজন হ্রাস: টনসিল ক্যান্সার ওজন হ্রাসের কারণ হতে পারে। যেকোনো ক্যান্সার হলেই ওজন হ্রাস পায়। আচমকা ওজন হ্রাস হলে, টনসিল ফুলে গেলে, গলা ব্যাথা এবং কাশির সাথে বা কাশি ছাড়া মুখ থেকে রক্ত পড়লে এসব কিছু টনসিল ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
  • জ্বর: টনসিল ক্যান্সারে জ্বর হতে পারে।

উপরোক্ত এসব লক্ষণ যদি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, তবে অবশ্যই একজন সার্টিফাইড ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা করুন। এতে করে, ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় থাকতেই নির্মূল করা সম্ভব হবে। নয়তো, ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়লে বাঁচার সম্ভাবনা কমে আসবে।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণ, টনসিল ক্যান্সার কেন হয় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি, পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। প্রাথমিক অবস্থায় সব ধরণের ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব। তাই, সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে এবং ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। দেরি করলে ক্যান্সার অনেক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, যা নির্মূল করা অসম্ভব প্রায়। স্বাস্থ্য বিষয়ক এমন কন্টেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আল্লাহ্‌ হাফেয।

Leave a Comment