ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী এবং চিকিৎসা কী

ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার হলে স্তন কেটে ফেলতে হয় যদি ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো যখন দেখা দেয়, তখন চিকিৎসা না নেয়া হয়। ক্যান্সার হওয়ার পর অনেক লক্ষণ দেখা যায়। আমরা যদি এই লক্ষণগুলো দেখেও ডাক্তারের পরামর্শ না নেই, চিকিৎসা না করি, তবে ক্যান্সার আরও ভয়াবহ রূপ ধারন করে। ফলাফল, একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী মারা যায়।

ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার মেয়েদের হয়ে থাকে। ভয়াবহ এই রোগ হওয়ার পূর্বে এবং হওয়ার পরে অনেক লক্ষণ দেখা যায়। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করবো। তো চলুন, শুরু করা যাক।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ
ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ

ক্যান্সার কী

ক্যান্সার হল একটি গুরুতর অসুখ যা শরীরের কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এবং বিস্তারের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ক্যান্সার কোষগুলি স্বাভাবিক কোষ থেকে আলাদা, কারণ তারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন এবং ছড়িয়ে পড়া শরীরের ক্ষতি করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ক্যান্সারের কারণে এখন অব্দি অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। ক্যান্সার হলেই এটি ধরা পড়ে না। যখন ক্যান্সার একদম শেষ পর্যায়ের দিকে চলে যায়, তখন ধরা পড়ে এবং শেষ সময়ে করার মতো আর কিছুই থাকে না।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের কী

স্তন ক্যান্সার হল একটি ক্যান্সার যা স্তনের কোষ থেকে শুরু হয়। মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার, এবং এটি পুরুষদের মধ্যেও হতে পারে। স্তন ক্যান্সারের অনেকগুলি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, জিনগত ত্রুটি এবং জীবনধারা।

স্তন গঠিত হয় fatty, fibrous, এবং glandular কলা (কোষ সমষ্টি) দিয়ে। মানুষের স্তনের মধ্যে থাকা কোষগুলি যদি হঠাৎ করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অধিক পরিমাণে বাড়তে শুরু করে, তখন এই ক্যান্সারের উৎপত্তি হয়। স্তনে থাকা বিভিন্ন কোষগুলির মধ্যে যে কোন কোষেই ক্যান্সার হতে পারে। তবে প্রধানত মাতৃ দুগ্ধ উৎপাদনে যুক্ত কোষেই ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি দেখা যায়।

সেই কারনে মহিলারাই এই রোগে সর্বাধিক আক্রান্ত হন। স্তনের মধ্যে থাকা বিভিন্ন কোষগুলির অতিরিক্ত বেড়ে ওঠার কারনে শরীরে স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন হয়। স্তনের অভ্যন্তরে মাংসল পিণ্ডের (lump) আকার অনুভূত হয়। যদিও যেকোনো পিণ্ডের মতন আকার স্তনের মধ্যে অনুভব করা মানেই ক্যান্সার হয়েছে এটা বলা যায় না। এটি একটি সাধারণ টিউমার ও হতে পারে।

আরও পড়ুন – দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি কি

শুধু মাত্র ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ই মারাত্মক ক্যান্সারের আকার নেয়। ম্যালিগন্যান্ট স্তন ক্যান্সার রক্ত এবং লসিকা (lymph) বাহিকার মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পরতে পারে। এই অবস্থা কে বলা হয় metastasized। 

ব্রেস্ট ক্যান্সার কত প্রকার

ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সাড়ের কিছু ধরণ আছে। এখন অব্দি ৫টি ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়েছে। এগুলো হচ্ছ –

  • Infiltrating (invasive) ductal carcinoma
  • Ductal carcinoma in situ
  • Infiltrating (invasive) lobular carcinoma
  • Lobular carcinoma in situ
  • Triple negative breast cancer

এই ৫ ধরণের ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার রয়েছে। এগুলো মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। তবে, ছেলেদের ক্ষেত্রেও হতে পারে।

স্তন ক্যান্সার কেন হয়

স্তন ক্যান্সার বিভিন্ন কারণে হতে পারে। স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ সম্পর্কে অধ্যাপক নাজনীন নাহার বলছেন, খাদ্যাভাসের পরিবর্তনের কারণে স্তন ক্যান্সার হতে পারে। আবার, কারও পরিবারের কোনো সদস্যের যদি আগে থেকে স্তন ক্যান্সার থাকে, তবে এটি হতে পারে। বারো বছরের আগে ঋতুস্রাব হয় এবং দেরিতে মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হলেও স্তন ক্যান্সার হতে পারে।

অধ্যাপক নাজনীন নাহার বলেন, দেরিতে সন্তান গ্রহণ, আবার যাদের সন্তান নেই, বা সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণীজ আমিষ বেশি থাকলে এবং প্রসেসড ফুড বেশি খেলে, এবং অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদেরও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।

আরও পড়ুন – জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

এছাড়াও, যারা দীর্ঘদিন যাবত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিন খাচ্ছেন, বা হরমোনের ঔষধ খাচ্ছেন, তারাও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন। স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার বয়স বেশি হলে হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় যদি স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসা করে ঠিক করা সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থায় ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে পারলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ

ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার পূর্বে কিংবা প্রাথমিক অবস্থায় ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা যায়। এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে প্রাথমিক অবস্থাতেই সঠিক চিকিৎসা করে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব। নিচে ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো উল্লেখ করে দিয়েছি।

  • স্তনে চাকা বা পিণ্ড দেখা দিলে
  • স্তনের বোঁটার কোন ধরনের পরিবর্তন, যেমন ভেতরে ঢুকে গেলে, অসমান বা বাঁকা হয়ে গেলে
  • স্তনের বোঁটা দিয়ে অস্বাভাবিক রস বের হলে
  • স্তনের চামড়ার রং বা চেহারায় পরিবর্তন হলে
  • বাহুমূলে পিণ্ড বা চাকা দেখা গেলে

এ ধরণের সমস্যাগুলো পরিলক্ষিত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। নয়তো, ব্রেস্ট ক্যান্সার আরও বৃদ্ধি হবে এবং একসময় ক্যান্সারের চিকিৎসা করার জন্য স্তন কেটে ফেলতে হবে।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের পরিক্ষা পদ্ধতি

তবে অধ্যাপক নাজনীন নাহার বলছেন, বয়স ৩০ বা ৩৫ হবার পর সব নারীর উচিত নিয়মিত নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখা। এজন্য ৩ ধরণের পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

১. নিজে নিজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী স্তনের ভিতরে কোনো ডলার বা পিন্ডের মতো কিছু আছে নাকি তা পরখ করা।

২. নির্দিষ্ট নিয়মে চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে স্তনের ভিতরে চাকা বা পিন্ডের মতো কিছু আছে কী না পরিক্ষা করা।

৩. ম্যামোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্স রে দিয়ে স্তনের ভিতর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, কোনো পিন্ড বা চাকা আছে কিনা পরিক্ষা করে দেখা।

আরও পড়ুন – গলার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে নিন

উপরোক্ত এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে কী না তা পরিক্ষা করতে হবে। ক্যান্সার হওয়ার পূর্বেই এসব পরিক্ষা করতে হবে। পরিক্ষা করা অবস্থায় যদি ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ধরা পড়ে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের দারস্থ হতে হবে।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ, ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয় এবং স্তন ক্যান্সার কীভাবে পরিক্ষা করতে হয় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি, পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। প্রাথমিক অবস্থায় সব ধরণের ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব। তাই, সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে এবং ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। দেরি করলে ক্যান্সার অনেক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, যা নির্মূল করা অসম্ভব প্রায়। স্বাস্থ্য বিষয়ক এমন কন্টেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আল্লাহ্‌ হাফেয।

Leave a Comment