ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

ফুসফুস ক্যান্সার হলে বাঁচার সম্ভাবনা অনেক কমে আসে। ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ নিয়ে আজ আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ফুসফুস আমাদের দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যেতে হবে। এই শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যাওয়ার জন্য ফুসফুস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদি ফুসফুসের সমস্যা হয়, তবে আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারবো না। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে।

অনেকেই ধূমপান এবং মদ্যপান করার কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার বাধিয়ে বসে থাকেন। ফুসফুস ক্যান্সার কী, ফুসফুস ক্যান্সার কেন হয়, ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ নিয়ে আজ আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো আর দেরি কিসের, চলুন শুরু করা যাক।

ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ

ফুসফুস ক্যান্সার কী

ফুসফুসের ক্যান্সার যা ইংরেজিতে Lung cancer নামে পরিচিত। ফুসফুস ক্যান্সার একটি রোগ যাতে ফুসফুসের টিস্যুগুলিতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষবৃদ্ধি ঘটে। এই বৃদ্ধির ফলে মেটাস্ট্যাসিস, প্রতিবেশী টিস্যু আক্রমণ এবং ফুসফুসের বাইরে সংক্রমণ ঘটতে পারে। এই সংক্রমন থেকে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়। সবথেকে ভয়াবহ এবং মরণব্যাধি এই ক্যান্সার থেকে বেঁচে যাওয়ার শঙ্কা অনেক কম।

ফুসফুস ক্যান্সার কেন হয়

ফুসফুসের ক্যান্সার হল একটি গুরুতর রোগ যা ফুসফুসের কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিভাজনের কারণে ঘটে। ফুসফুসের ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল ধূমপান। ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অ-ধূমপায়ীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি। ধূমপান ছাড়াও, ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় এমন অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ধূমপান: ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ। ধূমপানকারীদের অ-ধূমপায়ীদের তুলনায় ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা 20 গুণ বেশি। অনেকেই বিড়ি, সিগারেট, সদ্য আসা ই-সিগারেট বা ভ্যাপ সেবন করে থাকেন। এসব সেবন করার কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। মূলত, ধূমপান করার কারণেই ফুসফুসে ক্যান্সার হয়ে থাকে।
  • ধূমপানবিহীন তামাক ব্যবহার: ধূমপানবিহীন তামাক ব্যবহার, যেমন চিবানো তামাক, ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। অনেকেই পান-সুপারির সঙ্গে জর্দা এবং এমনিতেই মুখে গুল (তামাক পাতার গুড়ো) দিয়ে রাখেন। এসব তামাকজাতীয় খাবারের কারণেই ফুসফুসে ক্যান্সার হয়ে থাকে। শুধু তামাকপাতা দিয়েই অনেক ধরণের ধূমপানের দ্রব্য তৈরি হয়। যেমন – বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল ইত্যাদি।
  • বায়ু দূষণ: বায়ু দূষণ, যেমন গাড়ির ধোঁয়া এবং শিল্প থেকে নির্গত দূষণ, ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিজ্ঞানীদের একটি নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঘরের বাইরের দূষিত বাতাস আমাদের আয়ু গড়ে প্রায় তিন বছর পর্যন্ত কমিয়ে দিচ্ছে, যা আগের যেকোনো গবেষণা ফলাফলের চেয়ে বেশি এবং ধূমপানের ফলে যে পরিমাণ আয়ু কমে তার চেয়েও বেশি। যুদ্ধসহ সব ধরণের সংঘাতে পৃথিবীতে প্রতি বছর মানুষের আয়ু যতটা কমে, তার চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি গড় আয়ু কমে বায়ু দূষণের কারণে।
  • পারিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার পরিবারের ইতিহাসে ফুসফুসের ক্যান্সার থাকে, তাহলে আপনার ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি হতে পারে।
  • কিছু নির্দিষ্ট জিনগত অবস্থা: কিছু নির্দিষ্ট জিনগত অবস্থা, যেমন অ্যাক্রোমেগালি এবং নেফ্রোনোফ্যাটিক সিন্ড্রোম, ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

গবেষকরা ২০১৫ সালে মানুষের গড় আয়ু ও মৃত্যুর হার গণনা করেন, এবং তারা দেখতে পেয়েছেন, বায়ু দূষণের কারণে পৃথিবীতে ৮৮ লাখ মানুষ মারা যায়।

আরও পড়ুন – দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি কি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে ধূমপানের কারণে প্রতি বছর ৮২ লাখের বেশি মানুষ মারা যায় বিশ্ব জুড়ে। এর মধ্যে ৭০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায় সরাসরি সিগারেট এবং তামাকজাত পণ্যের ব্যবহারের কারণে। এসব দ্রব্য সেবন করা ছাড়তে পারলে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। পুরো বিশ্বব্যাপী ধূমপান মৃত্যুর কারণ এই কথাটি ছড়িয়ে দিচ্ছে অনেকেই, অনেক ভাবে। কিন্তু, তবু জেনেও অনেকেই ধূমপান করছেন। নেশা করার কারণেই তাদের মাঝে অধিকাংশ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন শেষ বয়সে এসে কিংবা অনেকেই মাঝবয়সেই।

ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ

ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণগুলো তখনই ধরা পড়ে, যখন একজন মানুষ দীর্ঘদিন যাবত ধূমপান বা মদ্যপানের সঙ্গে জড়িত থাকে। ধূমপান করার কারণে ধূম্রপায়ীর ভিতরে বিড়ি-সিগারেট এর ধোঁয়া বা জর্দা-গুল গলা দিয়ে ভিতরে যায়। ধোঁয়া গিয়ে সরাসরি ফুসফুসে আক্রমন করে। ফলাফল, এভাবে অনেকদিন যাবত ধূমপান করায় ফুসফুসের অনেক কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং একসময় তা ক্যান্সারের রূপ নিয়ে পুরো ফুসফুস আক্রান্ত করে ফেলে।

প্রাথমিক অবস্থায় ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে এবং ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু, ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণগুলো দেখার পড়েও যদি কেউ ধূমপান না ছাড়ে, তখন ক্যান্সার পুরো ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে এবং একসময় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। নিচে ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ উল্লেখ করে দিয়েছি। এগুলো আপনার ক্ষেত্রে দেখা দিলে, অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

আরও পড়ুন – ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে রাখুন

ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হচ্ছে –

  • দীর্ঘস্থায়ী কাশি: ফুসফুসের ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল দীর্ঘস্থায়ী কাশি। যদি আপনার কাশি এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় বা খারাপ হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ ধরণের দীর্ঘস্থায়ী কাশি ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
  • শ্বাসকষ্ট: ফুসফুসের ক্যান্সার শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। আপনি যদি হাঁটার সময় বা বিশ্রামের সময় শ্বাস নিতে অসুবিধা বোধ করেন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ফুসফুসে যখন ক্যান্সার আক্রমন করে, তখন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
  • বুকে ব্যথা: ফুসফুসের ক্যান্সার বুকে ব্যথার কারণ হতে পারে। ব্যথা তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
  • ক্লান্তি: ফুসফুসের ক্যান্সার ক্লান্তির কারণ হতে পারে। আপনি যদি হঠাৎ করে ক্লান্ত বোধ করেন বা আপনার দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে অসুবিধা হয় তবে ডাক্তারের সাথে দেখা করে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে কী না পরিক্ষা করতে হবে। ফুসফুসে সমস্যা হলে এ ধরণের লক্ষণ দেখা যায়।
  • ওজন হ্রাস: ফুসফুসের ক্যান্সার ওজন হ্রাসের কারণ হতে পারে। হঠাৎ করে ওজন কমে গেলে তা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। প্রায় সব ধরণের ক্যান্সারের কারণেই ওজন হ্রাস হয়ে থাকে।
  • কাশি দিয়ে রক্ত ​​বের হওয়া: ফুসফুসের ক্যান্সার কাশি দিয়ে রক্ত ​​বের হওয়ার কারণ হতে পারে। রক্ত লাল বা বাদামী হতে পারে। কাশির সঙ্গে রক্ত থাকলে তা কখনোই সাধারণ কোনো কারণ হতে পারে না। কাশির সাথে রক্ত থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
  • গলায় ব্যথা: ফুসফুসের ক্যান্সার গলায় ব্যথার কারণ হতে পারে। গলা অধিক ব্যাথা বা কোনো কিছু খাওয়ার সময় গলায় লাগা এসব ক্যান্সারের লক্ষণ।

মূলত ফুসফুস ক্যান্সার হলে উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়। আপনি যদি ফুসফুসে ক্যান্সারের লক্ষণগুলো আপনার ক্ষেত্রে বা অন্য কারও ক্ষেত্রে দেখেন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় যেকোনো ধরণের ক্যান্সারের চিকিৎসা করে সুস্থ হওয়া সম্ভব। দেরি করে ফেললে ক্যান্সার অনেক মারাত্মক রূপ নেয় এবং তা শেষ অব্দি মৃত্যু অব্দি গড়ায়।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ, ফুসফুস ক্যান্সার কেন হয় এবং ফুসফুস ক্যান্সার কী এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি, পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। প্রাথমিক অবস্থায় সব ধরণের ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব। তাই, সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে এবং ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। দেরি করলে ক্যান্সার অনেক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, যা নির্মূল করা অসম্ভব প্রায়। স্বাস্থ্য বিষয়ক এমন কন্টেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আল্লাহ্‌ হাফেয।

Leave a Comment