গলার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে নিন

গলার ক্যান্সারের লক্ষণ নিয়ে আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ক্যান্সার শরীরের যেকোনো অঙ্গেই হোক না কেন, তা আমাদের জন্য অনেক ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। ক্যান্সার থেকে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা কিন্তু কম না। প্রতি বছর ক্যান্সারের কারণে আমাদের দেশের এবং বিভিন্ন দেশের অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।

গলার ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, টনসিল ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার সহ আরও অনেক ধরণের ক্যান্সার রয়েছে। আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে গলার ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ নিয়ে আলোচনা করবো। এছাড়াও, ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তা নিয়েও আপনাদের সাথে বিভিন্ন স্বাস্থ্য টিপস শেয়ার করবো। তো চলুন, শুরু করা যাক।

গলার ক্যান্সারের লক্ষণ
গলার ক্যান্সারের লক্ষণ

ক্যান্সার কী

ক্যান্সার হল একটি গুরুতর অসুখ যা শরীরের কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এবং বিস্তারের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ক্যান্সার কোষগুলি স্বাভাবিক কোষ থেকে আলাদা, কারণ তারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন এবং ছড়িয়ে পড়া শরীরের ক্ষতি করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ক্যান্সারের কারণে এখন অব্দি অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। ক্যান্সার হলেই এটি ধরা পড়ে না। যখন ক্যান্সার একদম শেষ পর্যায়ের দিকে চলে যায়, তখন ধরা পড়ে এবং শেষ সময়ে করার মতো আর কিছুই থাকে না।

ক্যান্সার হওয়ার কারণ কী

ডিএনএ রূপান্তর এবং মিউটেশনগুলি ক্যান্সারের প্রধান কারণ। যখন কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে তখন ক্যান্সারের কারণ দেখা দেয়। তা ছাড়াও কিছু রাসায়নিকের কারণে অতিবেগুনী রশ্মি একজন ব্যক্তির ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। কিছু ক্যান্সার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি এবং ডায়েটের কারণে হতে পারে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন কিছু কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • বয়স: ক্যান্সার সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। প্রবীণ বয়সে অনেককেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। কারণ, ক্যান্সার হলেও তা সহজেই ধরা পড়ে না।
  • পারিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অর্থাৎ, আপনার পরিবারের কেউ যদি আগে থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে আপনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অঙ্কাংশে বেড়ে যাবে।
  • ধূমপান: ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
  • অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে কোলন এবং রেকটাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং মূত্রাশয় ক্যান্সার।
  • অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য: অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য, যেমন অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার, লাল মাংস এবং ফাস্ট ফুড খাওয়া, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: শারীরিক পরিশ্রমের অভাব বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে কোলন এবং রেকটাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার।
  • অতিরিক্ত সূর্যের সংস্পর্শ: অতিরিক্ত সূর্যের সংস্পর্শ ত্বকের ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
  • কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া: কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া, যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV), হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এবং হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV), ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

এসব কারণে মূলত ক্যান্সার হয়ে থাকে। এখন আমরা আলোচনা করবো, গলার ক্যান্সারের লক্ষণ নিয়ে। অর্থাৎ, গলার ক্যান্সার কেন হয় এসব বিষয় নিয়ে।

আরও পড়ুন – নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

গলার ক্যান্সারের কারণ

গলার ক্যান্সারের কারণগুলোর মাঝে সবথেকে বেশি হচ্ছে ধূমপান করা। অতিরিক্ত ধূমপান করার কারণে গলার ক্যান্সার হয়ে থাকে। এছাড়াও, অতিরিক্ত পরিমাণে মদ পান করলে কিংবা পুষ্টির অভাবেও গলার ক্যান্সার হতে পারে। গলার ক্যান্সার হলে অনেক লক্ষণ দেখা যায়। শরীরে অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে গলা যেহেতু অনেক বেশি সেন্সিটিভ, তাই গলার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো অনেক দ্রুত ধরা পড়ে।

তো চলুন, গলার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে নেয়া যাক।

গলার ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ

সবথেকে বহুল দেখতে পাওয়া গলার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হচ্ছে, গলায় ও মুখে ব্যথা করা, শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া, দাঁতের সমস্যা দেখা দেওয়া, দীর্ঘদিন কফ ও কাশি থাকা, চোয়াল ও জিহ্বায় সমস্যা, হঠাৎ স্বরে পরিবর্তন ইত্যাদি। গলার ক্যান্সার হলে এসব সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়। এই লক্ষণগুলো যদি ধরা পড়ে, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

আরও পড়ুন – মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতাল ডাক্তার লিস্ট

কারণ, গলার ক্যান্সারের কারণে অনেক মানুষ মারা যাওয়ার নজির আছে। গলার ক্যান্সার হলে একজন মানুষ ঠিকমতো কোনো খাবার খেতে বা পানীয় পান করতে পারবেন না। তো চলুন, আরও কিছু গলার ক্যান্সারের লক্ষণ দেখে নেয়া যাক।

গলায় ও মুখে ব্যথা করা

গলায় ও মুখে অনবরত ব্যথা করা গলার ক্যান্সার হওয়ার একটি লক্ষণ। গলা ও মুখের ব্যাথা সাত দিনের বেশি সময় ধরে থাকলে এটি ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে হবে। এ ছাড়া মুখের ভেতরে সাদা দাগ দেখা দিলে এবং খাবার গিলতে সমস্যা হয়ে থাকে গলায় ক্যান্সার হলে। তাই এ সমস্যাগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সঠিক চিকিৎসা নিন। তাহলেই আবারও সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। হেলা ফেলা করলে ক্যান্সার হলেও তা অনেক বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন – কালো জিরার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

শ্বাস নিতে অসুবিধা

নানা কারণে শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে ওপরের সমস্যাগুলোর সঙ্গে যদি দীর্ঘদিন শ্বাস নিতে সমস্যা হতে থাকে, তবে এটি হতে পারে গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ। অর্থাৎ, অন্যান্য গলার ক্যান্সার এর লক্ষণগুলোর সাথে যদি দেখা যায় যে শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে, তবে বুঝতে হবে যে গলায় ক্যান্সার হয়েছে।

দাঁতের সমস্যা দেখা দেওয়া

গলায় ক্যান্সার হলে অনেক সময় অকারণে দাঁত নড়বড়ে হতে দেখা যায়। অনেক সময় দাঁত উঠেও যেতে পারে। কিংবা, দাতে ব্যাথা সহ আরও অনেক সমস্যা দেখা যায় যদি গলায় ক্যান্সার হয়।

আরও পড়ুন – গলায় কাটা নামানোর দোয়া

চোয়াল ও জিহ্বায় সমস্যা

মুখের নিচের দিকের চোয়াল নাড়াতে সমস্যা হলে এবং জিহ্বায় ঘা ও ক্ষত দেখা দেওয়া হতে পারে গলায় ক্যান্সার হওয়ার লক্ষণ। এ ছাড়া অনেক সময় জিহ্বা থেকে রক্ত পড়তেও দেখা যেতে পারে।

দীর্ঘদিন কফ ও কাশি থাকা

আপনার যদি দীর্ঘদিন ধরে কফ এবং কাশি থেকে থাকে, তবে এটিও গলায় ক্যান্সার হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। এর পাশাপাশি কফের সঙ্গে রক্ত পড়াও হচ্ছে ক্যান্সার হওয়ার মারাত্মক একটি লক্ষণ।

আরও পড়ুন – মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত

হঠাৎ স্বরে পরিবর্তন

হঠাৎ করেই যদি কণ্ঠের স্বরের পরিবর্তন হয়ে যায়, তবে এটি হতে পারে গলায় ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম লক্ষণ। তবে, ঠাণ্ডা লাগার কারণেও গলার স্বর পরিবর্তন হতে পারে। এক্ষেত্রে, আসলেই গলার ক্যান্সার হয়েছে কী না নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্যান্য লক্ষণগুলো দেখা দিয়েছে কী না তা যাচাই করতে হবে।

শেষ কথা

এই পোস্টে আপনাদের সাথে গলার ক্যান্সার হওয়ার কারণ, গলার ক্যান্সারের লক্ষণ এবং আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। উপরোক্ত লক্ষণগুলো যদি কারণ সাথে হুবহু মিলে যায়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিন।

Leave a Comment