স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে জেনে নিন

স্কিন ক্যান্সার বা ত্বকের ক্যান্সার হলে সহজেই ধরা পড়ে না। তবে, স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে আমাদের সেগুলো হেলা ফেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ, স্কিন ক্যান্সার আমাদের দেহের যেকোনো অঙ্গের চামড়ার উপর হতে পারে। স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে কীভাবে বুঝবেন, এবং কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন যে আপনার স্কিন ক্যান্সার বা ত্বকের ক্যান্সার হয়েছে তা নিয়েই আজকের এই পোস্ট।

পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।

স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ
স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ

ক্যান্সার কী

ক্যান্সার হল একটি গুরুতর অসুখ যা শরীরের কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এবং বিস্তারের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ক্যান্সার কোষগুলি স্বাভাবিক কোষ থেকে আলাদা, কারণ তারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন এবং ছড়িয়ে পড়া শরীরের ক্ষতি করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ক্যান্সারের কারণে এখন অব্দি অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। ক্যান্সার হলেই এটি ধরা পড়ে না। যখন ক্যান্সার একদম শেষ পর্যায়ের দিকে চলে যায়, তখন ধরা পড়ে এবং শেষ সময়ে করার মতো আর কিছুই থাকে না।

স্কিন ক্যান্সার কী

ত্বক হল মানবদেহের বৃহত্তম অঙ্গ, এবং এটি বিভিন্ন ধরণের কোষ দিয়ে তৈরি। স্কিন ক্যান্সার সাধারণত মেলানোসাইটস, বেসাল সেল এবং স্কোয়ামাস সেল নামে পরিচিত তিন ধরণের ত্বকের কোষে শুরু হয়। ত্বকের কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিভাজনের কারণে স্কিন ক্যান্সার হয়ে থাকে।

ত্বকের যেকোনো জায়গায় স্কিন ক্যান্সার হতে পারে। আমাদের সারা শরীর স্কিন বা ত্বক দ্বারা আবৃত। ত্বকে যখন কোনো ভাইরাস আক্রমণ করে বা ইনফেকশন হয়, তখন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ক্যান্সার হলে তা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের পুরো শরীর যেহেতু চামড়া দ্বারা আবৃত, তাই শরীরের এক জায়গায় ক্যান্সার হলে তা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে না।

চামড়ায় অস্বাভাবিক রকমের কোনো দাগ দেখলে অনেকেই তা এড়িয়ে চলেন। কিন্তু, এই দাগগুলো অনেক সময় ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে। তাই, শরীরের ত্বকে কোনো প্রকার দাগ বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা

স্কিন ক্যান্সার কেন হয়

অতিবেগুনী রশ্মি ত্বকের কোষগুলির ডিএনএকে ক্ষতি করতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ কোষগুলি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিভাজন শুরু করতে পারে, যা ত্বকের ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ত্বকের ক্যান্সার সাধারণত ত্বকের যে অংশগুলি রোদ থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেমন মুখ, ঘাড় এবং হাতের উপর দেখা যায়। তবে এটি শরীরের যেকোনো অংশে, এমনকি চোখ এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিতেও হতে পারে।

অতিরিক্ত রোদে কাজ করা বা অনেকক্ষণ যাবত অবস্থান করার ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের কোষের ক্ষতি করে থাকে। ফলে, স্কিন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। স্কিন ক্যান্সার শুধু রোদের অতিবেগুনি রস্মির কারণেই হয় না। যেসব অঙ্গ রোদের মাঝে থাকে না, সেগুলোতেও স্কিন ক্যান্সার হতে পারে।

আরও পড়ুন – ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

অনেকে প্রতিদিনই মেকাপ নেন। মেকআপের কেমিক্যালস ত্বকের কোষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ত্বকের ওপর এসব কেমিক্যালসের আস্তরণ ক্যান্সার ডেকে আনে। তাই প্রয়োজন ছাড়া মেকআপ না করাই ভালো।

স্কিন ক্যান্সারের ধরণ

প্রকারভেদ অনুযায়ী ত্বকের ৩ ধরণের ক্যান্সার হয়ে থাকে। প্রতিটি ক্যান্সার এর আক্রমন এবং ক্ষতি করার ধরনে পার্থক্য রয়েছে। স্কিন ক্যান্সারের ৩ ধরণ নিয়ে নিচে বিস্তারিত পাবেন।

  • বেসাল সেল কার্সিনোমা: বেসাল সেল কার্সিনোমা হল সবচেয়ে সাধারণ ধরণের ত্বকের ক্যান্সার। এগুলি সাধারণত ত্বকের যে অংশগুলি রোদ থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেমন মুখ, ঘাড় এবং হাতের উপর দেখা যায়। বেসাল সেল কার্সিনোমা সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং খুব কমই ছড়িয়ে পড়ে।
  • স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা: স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ ধরণের ত্বকের ক্যান্সার। এগুলি সাধারণত ত্বকের যে অংশগুলি রোদ থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেমন মুখ, ঘাড় এবং হাতের উপর দেখা যায়। স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, তবে এগুলি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • মেলানোমা: মেলানোমা হল সবচেয়ে গুরুতর ধরণের ত্বকের ক্যান্সার। এগুলি ত্বকের রঙের জন্য দায়ী কোষ থেকে শুরু হয়। মেলানোমা শরীরের যেকোনো অংশে, এমনকি চোখ এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিতেও হতে পারে। মেলানোমা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ

স্কিন ক্যান্সার হলে স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পায়। স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো দেখে আমরা আমাদের স্কিনে ক্যান্সার হয়েছে কী না শনাক্ত করতে পারি। স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো দেখার পরেও যদি আমরা অবহেলা করি, তবে তা আমাদের পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়বে যা ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে। যা আমরা কেউই চাই না। তো চলুন, স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ কী কী জেনে নেয়া যাক।

আরও পড়ুন – টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে রাখুন

স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হচ্ছে –

  1. শরীরে ত্বকের কোনো এক জায়গায় গোল দাগ হলে তা হতে পারে স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ। ত্বকে ক্যান্সার হলে চামড়ার উপরিভাগে কালো, গোলাপি, লাল ও বাদামি ধরনের বিভিন্ন রকমের দাগ দেখা যায়।
  2. বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চামড়ার এ রকম দাগে চুলকানি না জ্বলুনি দেখা দেয়।
  3. শরীরে তিল বা আঁচিল থাকলে তার দিকে নজর রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখুন তিল বা আঁচিলের আকার এবং রঙের মাঝে কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান হচ্ছে কিনা।
  4. নিচের ঠোঁটের চারিদিকে যদি কোনো দাগ দেখা যায়, তবে এই দাগ শুধুমাত্র হরমোনজনিত ব্রণ নয়, এর বাইরে অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে। এটি আসলে হজম সমস্যা এবং এনজাইম ফাংশনসংক্রান্ত সংকেত হতে পারে। এই স্থানে সাধারণত ব্রণ হয় না। সুতরাং দেখতে হবে এটি কীট ও জীবাণু সংক্রান্ত কোনো সমস্যা কিনা।
  5. ঋতুস্রাব বন্ধ কিংবা অন্য কোনো কারণে প্রায়ই ত্বকে ব্রণ ফুটে ওঠে। ব্রণ, চুল বৃদ্ধি কিংবা চুল পড়া অথবা শুষ্ক ত্বকের লক্ষণও হরমোন ভারসাম্যহীনতার কারণে হতে পারে। যদিও এ সমস্যাগুলো চিকিৎসক ছাড়া নির্ণয় করা কঠিন।
  6. পানি আপনার শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া বজায় রাখতে সাহায্য করে। শরীর পানি শোষণ না করলে ত্বকে প্রদর্শন করবে, ত্বক শুষ্ক ও নিস্তেজ হয়ে পড়বে। যদি ত্বক পানি শোষণ করে তবে সাধারণত কোনো দাগ থাকবে না। প্রতিদিন চাহিদামাফিক পানি পান করুন।
  7. ফুসকুড়ি, লাল ফোসকা বা ত্বকে এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

উপরোক্ত এসব সমস্যা দেখা দিলে বুঝে নিতে হবে যে ত্বকে ক্যান্সার হয়েছে বা হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে এবং সঠিক ভাবে উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। এতে করে, পরবর্তীতে কোনো সমস্যা হবে না।

আমাদের শেষ কথা

ফেরসাউদ অ্যাকাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে স্কিন ক্যান্সার কেন হয়, স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ এবং আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। আরও এমন বিভিন্ন তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আল্লাহ্‌ হাফেয।

Leave a Comment