সূরা ফালাক।। surah falaq bangla।। সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ বিস্তারিত ফজিলত

 

প্রিয় পাঠক আপনি যেহেতু এই পোস্টটি ওপেন করেছেন তার মানে নিশ্চয়ই আপনি সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ (surah falaq bangla) পড়তে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। কেননা আমাদের এই পোস্টে সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ (surah falaq bangla) উল্লেখ করা হয়েছে। তাই আর দেরি না করে সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ (surah falaq bangla) পড়ার জন্য আমাদের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।

সূরা ফালাক
সূরা ফালাক

আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার পর আপনি যেমন সুরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ (surah falaq in bangla) এর সাহায্যে খুব সহজেই পড়তে সক্ষম হবেন। তেমনি এর পাশাপাশি এই পোস্টটি পড়ে সূরা ফালাক এর বাংলা অর্থ, সূরা ফালাক এর শানে নুযুল, সূরা ফালাক এর তাফসীর এবং সূরা ফালাক এর ফজিলত সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।

সূরা ফালাক সম্পর্কে প্রয়োজনীয় আলোচনা

সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ (surah falaq bangla) উল্লেখ করার পূর্বে সূরা ফালাক সম্পর্কিত কিছু মৌলিক তথ্য সম্পর্কে আপনাদের অবহিত করা প্রয়োজন। কেননা প্রত্যেক মুসলিমেরই উচিত তাদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন শরীফের অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এই সূরাটি সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য জেনে নেওয়া। তাই আলোচনার প্রথমে সূরা ফালাক সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরব। তাহলে চলুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক। সূরা ফালাক পবিত্র কুরআনুল কারীমের অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি সূরা। 

এই সূরাটি পবিত্র কুরআনুল কারীমের ১১৩ নম্বর সূরা এবং এর আয়াত সংখ্যা মোট ৫টি। সূরা ফালাক মক্কায় নাযিল হয়েছিল নাকি মদিনায় নাজিল হয়েছিল এই বিষয়ে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। কোন কোন হাদিসের বর্ণনা এসেছে যে, সূরা ফালাক মক্কায় নাযিল হয়েছিল। আবার কোন কোন হাদিসের বর্ণনা এসেছে যে, সূরা ফালাক মদিনায় নাজিল হয়েছিল। এজন্য একথা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব হয় না যে, সূরা ফালাক মাক্কী সূরার অন্তর্ভুক্ত নাকি মাদানী সূরার অন্তর্ভুক্ত। সূরা ফালাক এর রুকুর সংখ্যা ১টি। 

আরো পড়ুনঃ surah nas।। সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ সহ।। sura nas bangla

এখানে রুকু বলতে সহজ ভাষায় অনুচ্ছেদকে বোঝানো হয়েছে। সূরা ফালাক এর আয়াতগুলোর মাধ্যমে শয়তানের অনিষ্ট হতে এবং কুমন্ত্রণা দানকারী মানুষের অনিষ্ট হতে মহান আল্লাহ তা’আলার দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। পবিত্র কুরআনুল কারীমের এই সূরাটি বিশেষ এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছিল। আর এই ঘটনা সম্পর্কে আমরা এই পোষ্টের নিচের অংশে সূরা ফালাক এর শানে নুযুল সম্পর্কে আলোচনা করার সময় বিস্তারিত জেনে নেব। 

এখানে যে বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষির কথা বলা হচ্ছে সেই একই পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি সূরা নাযিল হয়েছিল। আর এই সূরাটি হলো সূরা নাস। সূরা নাস এবং সূরা ফালাক মহান আল্লাহ তা’আলা একসঙ্গে নাযিল করেছিলেন। সূরা নাস এবং সূরা ফালাককে একত্রে আল্লাহ তা’আলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার সূরা বলা হয়। আর আল্লাহ তা’আলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার এই দুটি সূরাকে আরবি শব্দ “মু’আওবিযাতাইন” নামে অভিহিত করা হয়। 

সম্মানিত পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনি সূরা ফালাক সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য গুলো ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। এখন আমরা আমাদের আলোচনার পরবর্তী অংশে সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ (surah falaq bangla) উপস্থাপন করব। যাতে করে আপনারা খুব সহজেই সুরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ (surah falaq in bangla) করে পড়তে সক্ষম হন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ (surah falaq bangla)

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে সূরা ফালাক এর মোট আয়াত সংখ্যা ৫টি। তাই সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ (surah falaq bangla) উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে এই ৫টি আয়াত পৃথক পৃথক এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। সেজন্য সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ (surah falaq bangla) পর্যায়ক্রমিকভাবে নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

আয়াত-০১ঃ

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلْفَلَقِ

কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিল ফালাক।

আয়াত-০২ঃ

مِن شَرِّ مَا خَلَقَ

মিন শাররি মা-খালাক।

আয়াত-০৩ঃ

وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ

ওয়া মিন শাররি গা-ছিকিন ইযা-ওয়াকাব।

আয়াত-০৪ঃ

وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّٰثَٰتِ فِى ٱلْعُقَدِ

ওয়া মিন শাররিন নাফফা-ছা-তি ফিল ‘উকাদ।

আয়াত-০৫ঃ 

وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

ওয়া মিন শাররি হা-ছিদিন ইযা-হাছাদ।

প্রিয় পাঠক আপনারা যারা এই পোস্টটি পড়ছেন তারা নিশ্চয়ই পোস্টের টাইটেল দেখে সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ বিস্তারিত ফজিলত পড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে পোস্টটি ওপেন করেছেন। তাই আপনি যদি উপরে উল্লিখিত সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ (surah falaq bangla) মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয় এতক্ষণে আপনার সুরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ (surah falaq in bangla) এর সাহায্যে সহজে পড়তে পারার প্রথম উদ্দেশ্যটি সফল হয়েছে।

এরপরে আমাদের এই পোস্টটি ওপেন করার পেছনে আপনার দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটিকে সফল করার জন্য পোষ্টের নিচের অংশে সূরা ফালাক এর ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করব। তাই অন্য কোথাও না গিয়ে পোষ্টের বাকি অংশটুকুও মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।

সূরা ফালাক এর বাংলা অর্থ

একজন মুসলিম বাঙালির জন্য সূরা ফালাক এর প্রতিটি আয়াতের অর্থ বুঝে তেলাওয়াত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ (surah falaq bangla) পড়ার পাশাপাশি সূরা গুলোর বাংলা অর্থ জানা আবশ্যক। আর সূরা ফালাক এর বাংলা অর্থ জানার এই বিষয়টির কথা মাথায় রেখে আমরা নিম্নে সূরা ফালাক এর বাংলা অর্থ সমূহ সুন্দরভাবে উল্লেখ করেছি। সেজন্য আপনিও যদি সূরা ফালাক এর বাংলা অর্থ জেনে সূরা ফালাক তেলাওয়াত করার মাধ্যমে অধিক সওয়াব লাভ করতে চান তাহলে নিচে উল্লেখিত অর্থ গুলো জেনে নিন।

আয়াত-০১ঃ বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার।

আয়াত-০২ঃ তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে।

আয়াত-০৩ঃ অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়।

আয়াত-০৪ঃ গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে যাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে।

আয়াত-০৫ঃ এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

সূরা ফালাক এর শানে নুযুল

সূরা ফালাক এর বাংলা অর্থ হলো “নিশিভোর”। সূরা ফালাক মূলত কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপর নাযিল করেছিলেন সেই বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনাই হলো সূরা ফালাক এর শানে নুযুল। যেহুতু সূরা নাস এবং সূরা ফালাক একই সঙ্গে একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছিল তাই এই দুইটি সূরার শানে নুযুল এবং ফজিলত একে অপরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সূরা ফালাক এর শানে নুযুল সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রাঃ) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ইহুদি বংশভূত একটি ছেলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর খিদমতের কাজে নিযুক্ত ছিল। 

এই ছেলেটিকে কোনভাবে ফুসলিয়ে লাবীদ ইবনে আসাম নামক একজন ইহুদী এবং তার কন্যারা রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চুল আঁচড়ানোর চিরুনি এবং কয়েকটি চুল সংগ্রহ করে নেয়। তারপর এগুলোর মাধ্যমে তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর যাদু করে এবং যাদু করা এই চিরুনি এবং চুল গুলোকে “যারওয়ান” নামক কূপের মধ্যে থাকা একটি পাথরের নিচে স্থাপিত করে দেয়। পরবর্তীতে এই যাদুর প্রভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রায় সময় দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং তিনি যে কাজটি করেননি সেই কাজটিও করেছেন বলে অনুভব করতেন। 

আরো পড়ুনঃ সুরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ ।। surah ikhlas bangla ।। সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থসহ এর শানে নুযুল, তাফসীর এবং ফজিলত

তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর এই রকম অসুস্থতা প্রায় ৬ মাস যাবত চলতে থাকে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- কে এই যাদুর প্রভাব থেকে মুক্ত করে সুস্থ করার উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ পাক রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- কে একটি স্বপ্ন দেখান। আর এই স্বপ্নের বর্ণনায় হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, “একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) স্বপ্নে দেখেন ২ জন ব্যক্তি উনার কাছে আসল।তারপর তাদের মধ্যে একজন উনার মাথার কাছে এবং অন্যজন পায়ের কাছে বসল এবং বসার পর এই দুই ব্যক্তি পরস্পর কথোপকথন শুরু করল। 

কথোপকথন করার সময় তাদের শুরুটা কিছুটা এই রকম ছিল যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মাথার কাছে বসে থাকা ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে প্রশ্ন করল- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অসুখটা কি? তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি বললেন ইনি যাদুগ্রস্থ। তারপর পুনরায় প্রথম ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করলেন কে যাদু করেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল ইহুদিদের মিত্র লাবীদ ইবনে আসাম যাদু করেছে।” এভাবে তাদের কথোপকথন এবং প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- কে জানিয়ে দিলেন যে তার অসুস্থতার পেছনের কারণ হলো তিনি যাদুগ্রস্থ। সেইসঙ্গে এই যাদু থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কেও রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে মহান আল্লাহ তা’আলা জানিয়ে দিলেন। 

সুতরাং, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মহান আল্লাহর দেখানো পথ অনুযায়ী “যারওয়ান” নামক সেই কূপ থেকে চিরুনি এবং চুল গুলোকে উদ্ধার করে নিয়ে আসলেন। তারপর সূরা ফালাক এবং সূরা নাস নাযিল হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই সূরা দুইটি পাঠ করে উক্ত চিরুনি এবং চুলগুলোতে থাকা যাদু যুক্ত ১১টি গিরায় ফুঁ দিলেন। আর এরপর এই গিরা গুলো ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলে যেতে শুরু করলো এবং খুলে যাওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মহান আল্লাহ তা’আলার রহমতে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেন।

সূরা ফালাক এর তাফসীর

সূরা ফালাক এর তাফসীর সম্পর্কে অনেকেই বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে চান। তাই তাদের জন্য নিম্নে সূরা ফালাক এর তাফসীর বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ উল্লেখ করা হলোঃ

আয়াত-০১ঃ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلْفَلَقِ (কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিল ফালাক)। অর্থ- “বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার”।

এই আয়াতের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- কে সকল প্রকার যাদু টোনার অনিষ্ট এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে মহান আল্লাহ পাকের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই। যদিও এই আয়াতটি নাযিল হওয়ার সময় এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ পাক রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- কে যে কোন প্রকার অনিষ্ট হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য কেবল মাত্র তাঁরই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই নির্দেশকে মহান আল্লাহ পাক সমগ্র মানবজাতির জন্য কার্যকর করে দিয়েছেন। 

আরো পড়ুনঃ আলহামদুলিল্লাহ সূরা।alhamdulillah surah। surah-fatiha-bangla। সূরা ফাতিহা বাংলা অর্থসহ

এছাড়াও এখানে প্রভাতের পালনকর্তার নিকট আশ্রয় গ্রহণ করার কথাটির মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদেরকে বুঝাতে চেয়েছেন যে, যেকোন অনিষ্ট কিংবা খারাপ কাজ অন্ধকার রাতের সঙ্গে তুলনাযোগ্য। আর এই অন্ধকার রাত থেকে মুক্তি পেতে হলে দিনের আলো কিংবা প্রভাতের প্রয়োজন হয়। আবার এই রকম অনিষ্ট থেকে কিংবা রাতের গহীন অন্ধকার থেকে মুক্তি দানের ক্ষেত্রে একমাত্র ক্ষমতা কেবল মহান আল্লাহ পাকের নিকটই রয়েছে। 

অর্থাৎ, কেবলমাত্র আল্লাহ পাকই পারেন আমাদেরকে অন্ধকার রাতের পর প্রভাতের আলো দেখাতে। সেজন্যই এই আয়াতে আল্লাহ পাক প্রভাতের পালনকর্তার নিকট আশ্রয় চাওয়ার কথাটি উল্লেখ করে আমাদেরকে তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করার কথা বলেছেন।

আয়াত-০২ঃ مِن شَرِّ مَا خَلَقَ (মিন শাররি মা-খালাক)। অর্থ- “তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে”।

এই আয়াতে মাধ্যমে আল্লাহ পাক যে ভাবার্থটি আমাদেরকে বুঝিয়েছেন সেটা হলো যারা বিভিন্ন প্রকার খারাপ কাজ বা অনিষ্টের সঙ্গে লিপ্ত থাকে যেমনঃ কুমন্ত্রণা দানকারী মানুষ, ইবলিশ শয়তান কিংবা জ্বীন এদের সবাইকে আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন। আর এদের দ্বারা সৃষ্টিকৃত যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত এবং রোগ হতে মুক্তি লাভের একমাত্র উপায় হলো মহান আল্লাহ পাকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। কেননা তিনি ব্যতীত অন্য কারো ক্ষমতা নেই এই ধরনের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত থেকে আমাদেরকে মুক্তি দেওয়ার।

আয়াত-০৩ঃ وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ (ওয়া মিন শাররি গা-ছিকিন ইযা-ওয়াকাব)। অর্থ- “অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়”।

মানবজাতির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে যেকোনো খারাপ কাজ কিংবা অনিষ্টকারিতা সাধারণত অন্ধকার রাতে সংঘটিত হয়। সুতরাং, রাতের অন্ধকারে সংঘটিত হওয়া এ ধরনের অনিষ্টতাকারীতার ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট আশ্রয় পাওয়ার বিষয়টি উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

আয়াত-০৪ঃ وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّٰثَٰتِ فِى ٱلْعُقَدِ (ওয়া মিন শাররিন নাফফা-ছা-তি ফিল ‘উকাদ)। অর্থ- “গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে যাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে”।

এ আয়াতটি দ্বারা এমন ধরনের অনিষ্টকারীর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার কথা বলা হয়েছে যারা কিনা গিরাই ফুঁ দিয়ে মানুষের উপর যাদু করে মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে থাকে। যেমনটা লাবীদ ইবনে আসাম নামক একজন ইহুদী এবং তার কন্যারা রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চুল আঁচড়ানোর চিরুনি এবং কয়েকটি চুল সংগ্রহ করে তারপর সেগুলোর গিরাই ফুঁ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর যাদু করেছিল।

আয়াত-০৫ঃ وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ (ওয়া মিন শাররি হা-ছিদিন ইযা-হাছাদ)। অর্থ- “এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে”।

সূরা ফালাক এর সর্বশেষ আয়াত বা ৫ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদেরকে হিংসুক ব্যক্তির অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন। অর্থাৎ, যেসব মানুষ অন্য মানুষের যেকোনো বিষয়ের প্রতি হিংসা পোষণের দ্বারা মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে বা ক্ষতি করে থাকে এই ধরনের হিংসুক প্রকৃতির মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে মানবজাতিকে আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট শরণাপন্ন হয়ে আশ্রয় চাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

কারণ এই পৃথিবী যেহেতু মহান আল্লাহ তালা সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই যেহেতু সমস্ত ক্ষমতার একমাত্র অধিকারী। তাই সব ধরনের বিপদ-আপদ কিংবা অনিষ্ট হতে রক্ষা করার ক্ষেত্রে একমাত্র ক্ষমতা কেবল তাঁরই রয়েছে।

সূরা ফালাক এর ফজিলত

আমাদের এই পোস্টটির উপরের অংশে যখন আমরা সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ পড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলাম তখন আমরা বলেছিলাম যে এই পোস্টের পরবর্তী অংশে আমরা সূরা ফালাক এর ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করব। আর তাই সেই কথার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নে সূরা ফালাক এর ফজিলত সমূহ পর্যায়ক্রমিকভাবে উল্লেখ করা হলোঃ

  • রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) এক হাদিসে বর্ণনা করেছেন যে, “যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ, ফজরের নামাজের পর এবং মাগরিবের নামাজের পর সূরা ফালাক, সূরা নাস এবং সূরা ইখলাস এই ৩টি সূরা একই সঙ্গে পাঠ করবে সেই ব্যক্তি যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত থেকে সুরক্ষিত থাকবে”। (তিরমিযী শরীফ)
  • হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে নিজের দুই হাত একসাথে মিলিয়ে নিতেন। এরপর সূরা ফালাক, সূরা নাস এবং সূরা ইখলাস পড়ে দুই হাতে ফুঁ দিতেন। তারপর নিজের মাথা, মুখমণ্ডল এবং শরীরের সামনের দিক থেকে শুরু করে নিজের শরীরের যতটুকু অংশ হাত বুলানো সম্ভব ততটুকু অংশে দুই হাত দিয়ে হাত বুলিয়ে নিতেন। আর এই কাজটি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মোট ৩ বার করতেন”। (বুখারী শরীফ)
  • হযরত উকবা ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আমি তোমাদেরকে এমন ৩টি সূরার কথা বলছি যেগুলো তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও কুরআনে অবতীর্ণ হয়েছে। আর এই সুরা গুলো হলো সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস। সুতরাং, রাতে তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ঘুমাতে যেও না যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ কর”। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
  • আবু দাউদ শরীফের এক হাদিসের বর্ণনা এসেছে যে- “ফজরের ওয়াক্ত এবং মাগরিবের ওয়াক্তের ফরজ সালাতের পর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস ৩ বার করে পাঠ করা সুন্নত। সেইসঙ্গে অন্যান্য ওয়াক্তের ফরজ সালাতের পর এই ৩টি সূরা ১ বার করে পাঠ করার কথাও বলা হয়েছে উক্ত হাদিসে”। (আবু দাউদ)
  • হযরত উকবা ইবনে আমের (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তোমার কি জানা নেই আজ রাতে আমার উপর যে আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে এই আয়াত গুলোর মত কোন আয়াত অন্য কোথাও দেখা যায়নি এবং শোনা যায়নি। আর এই আয়াতগুলো হলো কুল আউযুবি রাব্বিল ফালাক ও কুল আউযু বিরাব্বিন নাস”। (মুসলিম)
  • একদিন এক সফর চলাকালীন সময়ে উকবা ইবনে আমেন (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাঃ) সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করালেন, তারপর রসূলুল্লাহ (সাঃ) মাগরিবের নামাযে এই সূরা গুলো তেলাওয়াত করে বললেন- এই সূরা গুলো ঘুমাতে যাওয়ার সময় এবং ঘুম শেষে বিছানা থেকে উঠার সময় পাঠ করো।
  • হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, “এক রাতে ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছিল এবং সেইসঙ্গে অন্ধকারও ছিল। তখন আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে খোঁজার জন্য বের হলাম। তারপর যখন রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে পেলাম তখন প্রথমেই তিনি বললেনঃ বল। এই কথা শুনে আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, কি বলব? তিনি বললেনঃ সূরা ইখলাস ও কূল আউযু সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো ৩ বার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে”। (মাযহারী)

উপরিউক্ত আলোচনা শেষে আমরা একথা স্পষ্ট রূপে বলতে পারি যে, সূরা ফালাক এর ফজিলত এবং নেয়ামত সমূহ অসীম। তাই সূরা ফালাক এর ফজিলত সমূহ পরিপূর্ণভাবে লাভ করার জন্য আমাদের উচিত উপরে বর্ণিত হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সূরা ফালাক নিয়মিত তেলাওয়াত করা।

সুরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ।। surah falaq in bangla।। সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আমরা আজকের এই পোস্টে সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ (surah falaq bangla), সূরা ফালাক এর বাংলা অর্থ, সূরা ফালাক এর শানে নুযুল, সূরা ফালাক এর তাফসীর এবং সূরা ফালাক এর ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের সামনে সুন্দর ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে পড়ার পর আপনি এখন সুরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ (surah falaq in bangla) এর মাধ্যমে খুব সহজেই পড়তে পারবেন। যদি এই পোষ্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে বা পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই পোস্টটিকে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর সেইসঙ্গে আপনি যাতে পরবর্তীতেও এরকম নতুন নতুন তথ্য সম্বলিত পোস্ট পড়তে পারেন সেজন্য আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment