লিভার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী তা নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ক্যান্সার বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। এর মাঝে লিভার ক্যান্সার অন্যতম। লিভার ক্যান্সার অনেকের হয়ে থাকে। লিভার ক্যান্সারের কারণে আমাদের দেশে এবং পুরো পৃথিবী জুড়ে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। কীভাবে লিভার ক্যান্সার হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে পারেন এবং কী কারণে লিভার ক্যান্সার হয়ে থাকে, সেসব বিষয় নিয়েই আজ বিস্তারিত আলোচনা করবো।
লিভার আমাদের দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। শরীরের যেকোনো অঙ্গের যদি ক্যান্সার হয়, তবে তা অনেক ভয়াবহ রূপ ধারন করতে পারে যদি আমরা ক্যান্সারের লক্ষণগুলো দেখেও এড়িয়ে যাই। তাই, আজ পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে লিভার ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ জেনে নিন। এতে করে, লিভার ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় থাকতেই ধরে ফেলতে পারবেন। তো চলুন, শুরু করা যাক।

আলোচ্য সূচি:
লিভার কী
যকৃৎ মেরুদণ্ডী ও অন্যান্য কিছু প্রাণীদেহে অবস্থিত একটি অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। মানবদেহে মধ্যচ্ছদার নিচে উদরগহ্বরের উপরে পাকস্থলীর ডান পাশে যকৃৎ অবস্থিত। এর রং লালচে খয়েরি। একে চলতি বাংলায় কলিজা বলে সচরাচর উল্লেখ করা হয়।
Also Read
আপনি হয়তো অনেকের কাছেই কলিজা শব্দটি শুনে থাকবেন। কলিজা বা যকৃত একই কথা। যকৃতের ইংরেজি শব্দ হচ্ছে লিভার। যা আমাদের দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ।
ক্যান্সার কী
ক্যান্সার হল একটি গুরুতর অসুখ যা শরীরের কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এবং বিস্তারের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ক্যান্সার কোষগুলি স্বাভাবিক কোষ থেকে আলাদা, কারণ তারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন এবং ছড়িয়ে পড়া শরীরের ক্ষতি করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন – টনসিল ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী জেনে রাখুন
ক্যান্সারের কারণে এখন অব্দি অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। ক্যান্সার হলেই এটি ধরা পড়ে না। যখন ক্যান্সার একদম শেষ পর্যায়ের দিকে চলে যায়, তখন ধরা পড়ে এবং শেষ সময়ে করার মতো আর কিছুই থাকে না।
লিভার ক্যান্সার কী
লিভার ক্যান্সার হল লিভারে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। লিভার হল একটি অঙ্গ যা পেটের উপরের ডান দিকে অবস্থিত। এটি শরীরের রক্ত পরিশোধন করে, হজমে সাহায্য করে এবং হরমোন তৈরি করে। লিভার ক্যান্সার একটি গুরুতর অবস্থা যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
লিভার ক্যান্সারের দুটি প্রধান ধরন হল হেপাটোসেলুলার কার্সিনোম (এইচসিসি) এবং কোলাঞ্জিওকারসিনোমা। এইচসিসি লিভারের কোষগুলি থেকে শুরু হয়, যা লিভারকে রক্ত সরবরাহ করে। কোলাঞ্জিওকারসিনোমা লিভারের টিউবগুলি থেকে শুরু হয়, যা পিত্ত নিঃসরণ করে।
আরও পড়ুন – দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি কি
লিভারে ক্যান্সার হলে তা পুরো লিভারজুড়ে আক্রমন করে এবং লিভার অকেজো করে তোলে। লিভারের ক্যান্সার হলে এটি পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্যান্সার পুরো শরীর ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে ফেলে। লিভার ক্যান্সার হওয়ার পূর্বে লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা যায়। লিভার ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি।
লিভার ক্যান্সারের কারণ
এমন কিছু কারণ রয়েছে বা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন অভ্যাসের সমস্যা আছে, যার কারণে লিভারে ক্যান্সার হয়ে থাকে। লিভার ক্যান্সার হয়, এমন কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি। তো চলুন, কারণগুলো দেখে নেয়া যাক।
- দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস এর সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।
- পারিবারিক ইতিহাস থাকলেও লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
- লিভার সিরোসিস, পিত্তথলির পাথরের কারণে হয়ে থাকে।
- সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সার কোষের কারণে শরীরের অন্য কোথাও ক্যান্সার থেকে লিভারে ছড়িয়ে পড়তে পাড়ে।
- দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন করার কারণে হয়ে থাকে।
- দীর্ঘদিন ধরে দূষিত পানি পান করার কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
- দীর্ঘদিন ধরে ছত্রাক যুক্ত খাবার বা পচা খাবার খেলে লিভার কান্সার হতে পারে।
- অতিরিক্ত লবনাক্ত খাবার, ভাঁজা-পোড়া খাবার খেলে লিভারে চর্বি জমে লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
- HBV (হেপাটাইটিস বি ভাইরাস) বা HCV (হেপাটাইটিস সি ভাইরাস) এর দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ লিভারের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ডায়াবেটিস থাকলেও লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ
লিভার ক্যান্সার হলে লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা যায়। লিভার ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ দেখার পর যখন দ্রুত চিকিৎসা নেয়া হবে, তখন প্রাথমিক অবস্থাতেই লিভারের ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব হবে। কিন্তু, ক্যান্সারের লক্ষণ দেখার পরেও যদি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা না নেয়া হয়, তখন তা অনেক ভয়াবহ রূপ ধারন করে মৃত্যু অব্দি হতে পারে। তো চলুন, যকৃতের ক্যান্সারের লক্ষণগুলো দেখে নেয়া যাক।
লিভার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হচ্ছে –
- ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাবে। এমন কোনো লক্ষণ যদি আপনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, তবে এটি হতে পারে যকৃতের ক্যান্সারের লক্ষণ। যকৃত ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তা অনেক ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
- সবসময় ক্লান্ত বোধ লাগা। যকৃত ক্যান্সার হলে সর্বদা ক্লান্ত লাগার মতো সমস্যা দেখা দেয়। যদি দেখেন যে, সবসময় ক্লান্ত লাগছে, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে লিভার পরিক্ষা করতে হবে।
- অসুস্থ বোধ হতে পারে বা ফ্লুর মতো লক্ষণ দেখা দিবে। এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অবশ্যই লিভার এবং পুরো শরীর পরিক্ষা করতে হবে ক্যান্সার হয়েছে কী না জানার জন্য।
- পেটের যে অংশে লিভার থাকে সেখানে মাঝে মাঝে বা সবসময় ব্যথা হতে পারে। যদি এই লক্ষণ দেখা যায়, তবে অনেকাংশে দেখা যায় লিভারে ক্যান্সার হতে পারে। কারণ, লিভারে সমস্যা বা ক্যান্সার হলে বেশিরভাগ সময় লিভারের সাইডে ব্যাথা হয়ে থাকে।
- পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, বদ-হজম হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিবে। উপরোক্ত লক্ষণগুলো এবং এই লক্ষণগুলো একসাথে দেখা দিলে লিভার পরিক্ষা করে দেখতে হবে ক্যান্সার হয়েছে কী না।
- জন্ডিস, পেটে পানি জমা এবং ত্বকে চুলকানির মতো লক্ষণ দেখা দিবে।
- মাঝে মাঝে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। এই লক্ষণটি অনেক ভয়াবহ আকারে ক্যান্সার ধারন করার পর দেখা দিয়ে থাকে।
- ক্ষুধা কমে যাবে এবং শরীরের ওজন হ্রাস পাবে। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর এমন সমস্যা হয়ে থাকে।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো লিভার ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিলে লিভার ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব।
আমাদের শেষ কথা
ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ, লিভার ক্যান্সার কেন হয় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি, পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। প্রাথমিক অবস্থায় সব ধরণের ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব। তাই, সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে এবং ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। দেরি করলে ক্যান্সার অনেক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, যা নির্মূল করা অসম্ভব প্রায়। স্বাস্থ্য বিষয়ক এমন কন্টেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আল্লাহ্ হাফেয।