প্রসেসর কাকে বলে? প্রসেসর এর কাজ কি?

 আপনি কি প্রসেসর কাকে বলে এবং প্রসেসর এর কাজ কি এই সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের পোষ্ট আপনার জন্য- আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস যেমনঃ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ট্যাব ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি। এই ডিভাইস গুলোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রসেসর, যাকে সিপিইউ (সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট)  হিসেবে আমরা জানি। প্রসেসর  কে মানুষের মস্তিষ্কের সাথে তুলনা করা য়েতে পারে। মস্তিষ্ক যেমন কমান্ডের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংগ প্রতঙ্গকে পরিচালনা করে প্রসেসরও তেমনি কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা অন্যান্য ইলেকট্রনিকস ডিভাইস কে ব্যবহারকারীর কমান্ড অনুযায়ী ফলাফল প্রদানের জন্য প্রসেসিং করে। তাই প্রসেসর এর গুরুত্ব বিবেচনা করে

আজকের পোস্টে আমরা জানব প্রসেসর কাকে বলে, প্রসেসর এর কয়টি অংশ, প্রসেসর এর প্রকারভেদ, প্রসেসর কিভাবে কাজ করে, কম্পিউটার প্রসেসর এর কাজ কি, কোন মাদারবোর্ডের সাথে কোন প্রসেসর, মোবাইল প্রসেসর কত প্রকার, মোবাইল প্রসেসর এর কাজ কি, ভালো প্রসেসর চেনার উপায়, মোবাইলের কোন প্রসেসর সবচেয়ে ভালো ইত্যাদি অর্থাৎ প্রসেসর এর A to Z নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। 

প্রসেসর কি বাংলা বা প্রসেসর কাকে বলে?

কম্পিউটারের অন্যতম প্রধান হার্ডওয়্যার হলো প্রসেসর। মূলত একে সিপিইউ বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট ও বলে। প্রসেসর কম্পিউটারের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস গুলোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পার্ট।  মূলত প্রসেসর একটি সয়ংসম্পন্ন এবং প্রোগ্রামেবল গানিতিক ইঞ্জিন যা নির্দেশনা অনুযায়ী কম্পিউটারের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও সম্পাদন করে থাকে। অর্থাৎ আমরা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় ইনপুট ডিভাইস এর মাধ্যমে যে নির্দেশনা প্রদান করি প্রসেসর সেগুলো সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার এর মাধ্যমে ডাটা বা উপাত্ত প্রসেস করে ডিসপ্লেতে ফলাফল প্রদর্শন করে। প্রসেসর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রসেসর হলো Intel এবং AMD. তবে আমাদের দেশে ইন্টেল প্রসেসর এর জনপ্রিয়তা অন্য কোম্পানির প্রসেসর এর তুলনায় একটু বেশি।

প্রসেসর কাকে বলে

প্রসেসর এর কয়টি অংশ

প্রসেসরের মূলত দুটি অংশ থাকে। যথাঃ 

  • নিয়ন্ত্রণ ইউনিট (CU)।
  • অ্যারিথমেটিক অ্যান্ড লজিক্যাল ইউনিট (ALU)।

নিয়ন্ত্রণ ইউনিট (CU):

নিয়ন্ত্রণ ইউনিট বা (CU) প্রসেসরের মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করে। নির্দেশাবলী ডিকোড করা, ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংকেত তৈরি করা এবং প্রসেসরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা মূলত নিয়ন্ত্রণ ইউনিট এর কাজ। নিয়ন্ত্রণ ইউনিটকে নিম্নলিখিত অংশগুলিতে ভাগ করা যায়:

  • ইনসট্রাকশন ডিকোডার: নির্দেশাবলী বিশ্লেষণ করে এবং বোঝে।
  • কন্ট্রোল লজিক: প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ সংকেত তৈরি করে।
  • রেজিস্টার ফাইল: নির্দেশাবলী এবং ডেটা ধারণ করে।

অ্যারিথমেটিক অ্যান্ড লজিক্যাল ইউনিট (ALU):

এই ইউনিট প্রসেসরের হৃদস্পন্দন হিসেবে কাজ করে। যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, এবং তুলনা করার মতো গাণিতিক এবং যুক্তিগত ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করে। ALU কে নিম্নলিখিত অংশগুলিতে ভাগ করা যায়:

  • অ্যারিথমেটিক লজিক ইউনিট (ALU): গাণিতিক এবং যুক্তিগত ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করে।
  • স্ট্যাটাস ফ্ল্যাগ: ALU-এর ক্রিয়াকলাপের ফলাফল সংরক্ষণ করে।

এছাড়াও, কিছু প্রসেসরে আরও কিছু অতিরিক্ত অংশ থাকতে পারে, যেমন:

  • ক্যাশ মেমরি: প্রায়শই ব্যবহৃত ডেটা এবং নির্দেশাবলী দ্রুত অ্যাক্সেসের জন্য সংরক্ষণ করে।
  • ফ্লোটিং-পয়েন্ট ইউনিট (FPU): ফ্লোটিং-পয়েন্ট অ্যারিথমেটিক সম্পাদন করে।
  • মেমরি কন্ট্রোলার: মেমরির সাথে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রসেসরের নির্দিষ্ট ডিজাইন এবং কার্যকারিতা নির্মাতা এবং মডেলের উপর নির্ভর করে।

প্রসেসর কি দিয়ে তৈরি?

আজকের দিনে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি হলো এই প্রসেসর। আবিষ্কারের পর থেকে এর উন্নয়ন হয়েছে অকল্পনীয় গতিতে। মজার বিষয় হলো প্রসেসরের উন্নয়নে প্রসেসরেরই সাহায্য নেওয়া হয়। তাই বলা যায় প্রতিনিয়ত প্রসেসর নিজেই নিজেকে উন্নত করে গড়ে তুলছে। প্রসেসর  তৈরি অসংখ্য ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) দিয়ে। আর আইসিগুলো তৈরি হয় ট্রানজিস্টার (Transistor) দিয়ে। এই সব বিদ্যমান থাকে একটি ক্ষুদ্র চিপ (Chip) এর মধ্যে। অর্থাৎ প্রসেসর তৈরির হয় অসংখ্য সিলিকন দিয়ে ছোট আকারের চিপ দিয়ে যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার কার্যকলাপ সম্পাদন করার জন্য ডিভাইসগুলির অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়। এর গতি পরিমাপ করা হয় মেগাহের্টজ এর শর্তাবলী এর মাধ্যমে। প্রসেসরে আইসির সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বাড়লেও চিপ এর আকার ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসছে। তবে আকার ছোট হলেও এর কাজ করার ক্ষমতা বেড়েই চলেছে। ইন্টেল কোম্পানী সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালে মাইকো্রপ্রসেসর উদ্ভাবন করে। যার নাম দেওয়া হয়েছিল ইন্টেল ৪০০৪ প্রসেসর। এই প্রসেসরটির উদভাবক ছিলেন “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেড হফ, স্ট্যান মেজর, ফেডরিকো ফ্যাগিন এবং জাপানের মাসাতোশি শিমা”।

আমরা আগেই জেনেছি জন্মের পর থেকেই প্রসেসরের ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আপনাদের কাছে স্পষ্ট হবে। ৪০০৪ মাইকোপ্রসেসরে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা ছিল ২৩০০ টি আর বর্তমানের কোর আই সেভেন প্রসেসরের ট্রানজিস্টরের সংখ্যা ২২৭,০০,০০,০০০ টি ! যা দ্বারা ভবিষ্যতের কথা কল্পনা করা যায়!  

প্রসেসর এর প্রকারভেদ বা প্রসেসর কত প্রকার ও কি কি?

  • Single Core Processor – সিঙ্গেল কোর প্রসেসর। 
  • Dual Core Processor – ডুয়েল কোর প্রসেসর। 
  • Quad Core Processor – কোয়ার্ড কোর প্রসেসর। 
  • Octa Core Processor – অক্টা কোর প্রসেসর

সিঙ্গেল কোর প্রসেসর কি

সিঙ্গেল কোর প্রসেসর সাধারণত ট্র্যাডিশনাল কম্পিউটারে ব্যাবহার করা হত। এই  প্রসেসরগুলো  একই সময়ে, শুধুমাত্র একটি কাজ করতে পারতো। একটির বেশি কাজ একসাথে করতে গেলে, কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যেত। এই টাইপের প্রসেসর আজকের দিনে নেই বললেই চলে। 

ডুয়েল কোর প্রসেসর কি

এই প্রসেসর একই সময়ে, একই সাথে দুটি কাজ করতে পারে বলে একে ডুয়েল কোর প্রসেসর বলে।  এই টাইপের প্রসেসরকে আলাদা আলাদা দুটি core এ বিভক্ত করা হয় যাতে local cache এবং controller সিস্টেম আলাদা হয়। ফফলশ্রুতিতে Dual Core Processor, একসাথে দুটি কাজ খুবই অল্প সময়ে সম্পন্ন করে।

কোয়ার্ড কোর প্রসেসর কি

এই ধরনের প্রসেসর চারটি কোর এ বিভক্ত থাকায় একই সময়ে একই সাথে ৪টি কাজ করতে সক্ষম বিধায় একে কোয়ার্ড কোর প্রসেসর বলে। যদি পাচ নম্বর কাজের কোন তথ্য আসে তাহলে যে কোরটির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে সেই কোরটি অটোমেটিক্যালি কাজটি করা করা শুরু করে। 

অক্টাকোর প্রসেসর কি

অক্টাকোর প্রসেসর হলো আটটি প্রসেসর বিশিষ্ট। আটটি প্রসেসর কে ২টি অংশে ভাগ করা হয়। একটি অংশ থাকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অন্যটি থাকে কম ক্ষমতা সম্পন্ন। এই প্রসেসরগুলো একই সাথে একই সময়ে আটটির বেশি কাজ করতে সক্ষম। এই প্রসেসরগুলি মাল্টি আর্কিটেকচার এর সাহায্যে ডিজাইন করা হয়েছে। এই প্রসেসর গুলো মূলত মোবাইলে ব্যবহার করা হয় কারণ মোবাইলে একসাথে অনেক কাজ করা হয়। 

প্রসেসর কিভাবে কাজ করে

প্রসেসর, যা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট বা সিপিউ নামেও পরিচিত এবং কম্পিউটারের মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করে। এটি নির্দেশাবলী গ্রহণ করে, ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে এবং কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রসেসরের কাজের পদ্ধতি:

  1. নির্দেশাবলী গ্রহণ: প্রসেসর প্রথমে মেমরি থেকে নির্দেশাবলী গ্রহণ করে। এই নির্দেশাবলী প্রোগ্রামের অংশ যা প্রসেসরকে কি করতে হবে তা বলে দেয়। 
  2. নির্দেশাবলী ডিকোড করা: নিয়ন্ত্রণ ইউনিট (CU) নির্দেশাবলী বিশ্লেষণ করে এবং সেগুলো ডিকোড করে। 
  3. ডেটা অ্যাক্সেস করা: প্রয়োজনে, CU মেমরি থেকে ডেটা অ্যাক্সেস করে।
  4. ডেটা প্রক্রিয়াকরণ: অ্যারিথমেটিক অ্যান্ড লজিক্যাল ইউনিট (ALU) গাণিতিক এবং যুক্তিগত কার্যাবলী সম্পাদন করে।
  5. ফলাফল সংরক্ষণ: ALU-এর কার্যকলাপের ফলাফল রেজিস্টার ফাইলে বা মেমরিতে সংরক্ষণ করা হয়।
  6. নির্দেশাবলী সম্পাদন করা: CU পরবর্তী নির্দেশাবলী গ্রহণ করে এবং প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করে।

এই প্রক্রিয়াটি ক্রমাগত চলতে থাকে যতক্ষণ না কম্পিউটার বন্ধ করা হয়। প্রসেসর যত দ্রুত কাজ করতে পারবে, কম্পিউটার তত দ্রুত কাজ করবে।

কম্পিউটার প্রসেসর এর কাজ কি

প্রসেসর এর মূল কাজ হলো ইউজার কর্তৃক ইনপুটকৃত কমান্ড প্রক্রিয়া করে আউটপুট প্রদান করা অর্থ্যাৎ কোনো ডিভাইস যখন নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে সেই কাজের ফলাফল কে  আউটপুট বলা হয়। আর যে কোনো ডিভাইস এর সঠিক আউটপুট প্রদান করাই হলো প্রসেসর এর প্রধান কাজ।

কম্পিউটার প্রসেসরের প্রধান কাজগুলি নিন্মরুপ:

  • নির্দেশাবলী গ্রহণ এবং ব্যাখ্যা: প্রসেসর প্রোগ্রাম দ্বারা প্রদত্ত নির্দেশাবলী গ্রহণ করে এবং বুঝতে পারে। এই নির্দেশাবলী কীভাবে কাজগুলি সম্পাদন করতে হবে তা নির্ধারণ করে।
  • গাণিতিক এবং যুক্তিগত ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন: প্রসেসর যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, তুলনা এবং আরও অনেক কিছু করতে পারে। এটি ডেটা প্রক্রিয়াকরণ এবং কম্পিউটেশন করার জন্য প্রয়োজনীয়।
  • ডেটা অ্যাক্সেস এবং ম্যানিপুলেট করা: প্রসেসর মেমরি থেকে ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারে এবং প্রয়োজনে এটিকে পরিবর্তন করতে পারে।
  • ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইসগুলি নিয়ন্ত্রণ করা: প্রসেসর কীবোর্ড, মাউস, মনিটর, প্রিন্টার এবং অন্যান্য ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইসগুলি নিয়ন্ত্রণ করে।
  • অন্যান্য হার্ডওয়্যার উপাদানের সাথে যোগাযোগ: প্রসেসর মাদারবোর্ড, গ্রাফিক্স কার্ড, স্টোরেজ ড্রাইভ এবং অন্যান্য হার্ডওয়্যার উপাদানের সাথে যোগাযোগ করে।

প্রসেসর কাকে বলে এবং কাজ কি- শেষ কথা

পাঠক, আজকের পোস্টে আমি আপনাদেরকে প্রসেসর কাকে বলে এবং প্রসেসর এর কাজ কি ‍সম্পর্কে সকল  ধরনের তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি প্রসেসর কাকে বলে এবং এর কাজ কি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাদি আমাদের আজকের পোষ্টে পেয়ে গেছেন। আমাদের এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক ‍আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়ে থাকে নিয়মিত। আপনারা যারা এই ধরনের আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে চান তারা আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারেন। আশাকরি বিভিন্ন ইনফরমেটিভ বা শিক্ষামূলক আর্টিকেল পড়তে পারবেন প্রতিনিয়ত। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment