সুপার কম্পিউটার কাকে বলে? এর জনক কে? সুপার কম্পিউটারের নাম এবং বৈশিষ্ট্য

সুপার কম্পিউটার কাকে বলে, সুপার কম্পিউটার এর জনক কে এবং এই কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। প্রচলিত সকল কম্পিউটারের তুলনায় যে কম্পিউটার অনেক দ্রুত কাজ করতে পারে, হিসেব নিকেশ অনেক দ্রুত করতে পারে, এমন কম্পিউটারকেই সুপার কম্পিউটার বলা হয়ে থাকে।

পুরো পৃথিবীতে হাতে গোনা কয়েকটি সুপার কম্পিউটার রয়েছে। তাই, অনেকেই জানেন না যে, সুপার কম্পিউটার কি এবং এই কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য কি। এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে Super Computer এর কাজ কি এবং এই কম্পিউটারগুলোর নাম জানতে পারবেন। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।

সুপার কম্পিউটার কাকে বলে
                              সুপার কম্পিউটার কাকে বলে

কম্পিউটার শব্দের অর্থ হচ্ছে গণনা করার যন্ত্র। কম্পিউটার ব্যবহার করে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে কম্পিউটার ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন হিসাব করা, লেখার কাজ করা, ছবি আঁকা, এবং গেম খেলা, বিনোদন এর মাধ্যম এবং টাকা ইনকাম করার সোর্স।

সুপার কম্পিউটার কি

সুপার কম্পিউটার হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের কম্পিউটার যা প্রচুর পরিমাণে গণনা করতে সক্ষম। এগুলি সাধারণত বিজ্ঞান, গবেষণা এবং প্রকৌশল ক্ষেত্রে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। সুপার কম্পিউটারগুলি প্রচুর পরিমাণে মেমরি, CPU এবং অন্যান্য হার্ডওয়্যার দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে যা এই কম্পিউটারকে যেকোনো কাজ অনেক দ্রুত করতে সক্ষমতা প্রদান করে। ফলে, সুপার কম্পিউটার দিয়ে গবেষণার কাজগুলো অনেক দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হয়।

সুপার কম্পিউটার একটি বিশেষ অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয় যা এগুলিকে তাদের বিশাল ক্ষমতা ব্যবহার করার সক্ষমতা প্রদান করে থাকে।

১৯৬০ সালের দিকে কন্ট্রোল ড্যাটা কর্পোরেশন (সিডিসি) এর সেইমার ক্রে সর্বপ্রথম প্রাথমিক ভাবে সুপার কম্পিউটারের একটি ডিজাইন তৈরি করেন এবং তা পৃথিবীর কাছে তুলে ধরেন। ১৯৭০ সালের দিকের সুপার কম্পিউটারগুলোতে সামান্য কয়েকটি প্রসেসর ব্যবহার করা হয়ে থাকলেও ১৯৯০ সালের দিকের সুপার কম্পিউটারগুলোতে হাজার হাজার প্রসেসর ব্যবহার হতো। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে সুপার কম্পিউটারে প্রসেসরের এ সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।

সুপার কম্পিউটারে একাধিক প্রসেসর থাকায় কাজ করার জন্য দুইটি পদ্ধতি রয়েছে। এর মাঝে যেকোনো একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজ করতে হয়। এগুলো হচ্ছে – গ্রিড কম্পিউটিং এবং ক্লাস্টার কম্পিউটিং

সুপার কম্পিউটার কাকে বলে

যে কম্পিউটার অন্যান্য সকল কম্পিউটারের থেকে সবথেকে বেশি পরিমাণ ডাটা প্রসেস করতে পারে, দ্রুত গণনা করতে পারে, অনেক বেশি পরিমাণে ডাটাবেজ পরিচালনা করতে পারে এবং একই সঙ্গে পরিচালনা করা ও তৈরি করা অনেক ব্যয়বহুল, তাকে সুপার কম্পিউটার বলে। সুপার কম্পিউটার পুরো বিশ্বে মাত্র কয়েকটি রয়েছে। এর মাঝে চিন তৃতীয় সুপার কম্পিউটার তৈরি করেছে।

আমরা যেসব ডেস্কটপ কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যবহার করি, এগুলোতে একটি মাত্র প্রসেসর থাকে। কিন্তু, সুপার কম্পিউটারে বর্তমানে লক্ষাধিক প্রসেসর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সুপার কম্পিউটার তৈরি এবং পরিচালনা করা অনেক ব্যয়বহুল। কোনো ব্যক্তি একার জন্য সুপার কম্পিউটার ক্রয় করে থাকে না।

সুপার কম্পিউটার তৈরি এবং ব্যবহার করা হয়ে থাকে প্রাতিষ্ঠানিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে। যেখানে অনেক দ্রুততার সহিত গণনা কিংবা ডেটাবেজ পরিচালনা করতে হয়। মহাকাশ গবেষণা, বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট, আবিস্কার, চিকিৎসা বিজ্ঞানে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সুপার কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

সুপার কম্পিউটারের সুপার শব্দটির মাধ্যমেই বোঝা যায় এই কম্পিউটারের গতি কেমন! আমাদের সাধারণ কম্পিউটারে যেখানে একটি মাত্র প্রসেসর থাকে, সেখানে সুপার কম্পিউটার প্রথম তৈরির পর কয়েকটি প্রসেসর ব্যবহার করা হতো। যা সুপার কম্পিউটার তৈরির এক দশক পরে হাজারে পৌঁছায়। বর্তমানে একটি সুপার কম্পিউটারে কয়েক লক্ষ প্রসেসর ব্যবহার করা হয় যা এই কম্পিউটারকে অনেক বেশি গতিতে যেকোনো কাজ করার সক্ষমতা প্রদান করে।

শুধু গতি নয়, বরং এই কম্পিউটার দিয়ে অনেক কঠিন হিসেব, বিশাল বড় ডাটাবেজ পরিচালনা করা, একটি পুরো প্রতিস্থানের সকল কর্মী পরিচালনা করা, এ সকল সুবিধা রয়েছে একটি কম্পিউটারে। সাধারণত, যেসব প্রতিষ্ঠান অনেক বড়, যেমন গুগল, মাইক্রোসফট,ফেসবুক ইত্যাদি, এসব প্রতিষ্ঠানে সুপার কম্পিউটার প্রয়োজন হয়ে থাকে। গুগল সম্প্রতি সুপার কম্পিউটারের থেকেও কয়েক হাজার গুণ বেশি গতি সম্পন্ন কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করেছে।

সুপার কম্পিউটারের কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নে একটি তালিকা আকারে উল্লেখ করে দিলাম।

  • প্রচুর পরিমাণে CPU(প্রসেসর) ব্যবহার করা হয়ে থাকে একটি সুপার কম্পিউটারে।
  • প্রচুর পরিমাণে মেমরি ব্যবহার করা হয় একটি সুপার কম্পিউটার তৈরি করার সময়।
  • বিশেষ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে সুপার কম্পিউটার পরিচালনা করা হয়।
  • শীতল করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এতে করে কম্পিউটার অনেক দ্রুত কাজ করতে পারে।
  • ব্যয়বহুল যা সাধারণ কোনো মানুষের জন্য নয়। বড় প্রতিস্থানের জন্য সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ অনেক দ্রুত সম্পাদন করা হয়ে থাকে।
  • বড় আকারের কম্পিউটার। যা রাখার জন্য অনেক বড় রুমের প্রয়োজন হয়।
  • মহাকাশ অনুসন্ধান অর্থাৎ মহাকাশ গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়। গ্রহ এবং নক্ষত্রগুলির গতিবেগ অনুসরণ করতে এবং নতুন গ্রহগুলি আবিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয়।
  • সুপার কম্পিউটারগুলি পরমাণু শক্তিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি পারমাণবিক চুল্লিগুলির নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নতুন পারমাণবিক শক্তি প্রযুক্তি বিকাশ করতে ব্যবহৃত হয়।
  • সামরিক গবেষণার কাজে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • সুপার কম্পিউটারগুলি চিকিৎসা গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। এগুলি নতুন ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি বিকাশ করতে, রোগের কারণ নির্ণয় করতে এবং রোগের চিকিৎসা করতে ব্যবহৃত হয়।
  • সুপার কম্পিউটার তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যবহৃত হয়। এগুলি তেল ও গ্যাসের ক্ষেত্রগুলি সনাক্ত করতে, তেল ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নতুন পদ্ধতি বিকাশ করতে এবং তেল ও গ্যাসের পরিবেশগত প্রভাবগুলি অধ্যয়ন করতে ব্যবহৃত হয়।
  •  সুপার কম্পিউটারগুলি জটিল আবহাওয়ার মডেল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ঝড়ের সতর্কতা এবং অন্যান্য আবহাওয়া-সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়।
  • সুপার কম্পিউটারগুলি সাধারণ কম্পিউটারের তুলনায় অনেক বেশি গণনা করতে পারে। এগুলি প্রতি সেকেন্ডে লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি গণনা করতে সক্ষম।

সুপার কম্পিউটারগুলি খুব ব্যয়বহুল এবং সেগুলি সাধারণত বড় সংস্থা বা সরকারী সংস্থাগুলি দ্বারা কেনা হয়। এগুলি সাধারণত ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস একাডেমির আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে সুপার কম্পিউটার কি, সুপার কম্পিউটার কাকে বলে এবং সুপার কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছি। অনেকেই কম্পিউটার বলতে শুধু মাইক্রো কম্পিউটার বা ডিজিটাল কম্পিউটার বুঝে থাকেন। কিন্তু, এগুলো ছাড়াও যে আরও কম্পিউটার রয়েছে তা সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। পোস্টটি সম্পূর্ণ পরে থাকলে আশা করছি সুপার কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। এমন আরও ব্লগ পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

Leave a Comment