তাহাজ্জুদ নামাজের সময় | তাহাজ্জুদ নামাজের শেষ সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন শুরু হয় এবং তাহাজ্জুদ নামাজের শেষ সময় সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হলে নামাজ শুরুর সময় এবং নামাজের শেষ সময় জানা আবশ্যক। কারণ, তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা করে কোনো আজান দেয়া হয় না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যেমন আজান দেয়া হয়, তেমন তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য আজান হয় না। তাই, আমাদের নিজেদেরকে গুরুত্ব সহকারে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় শুরু হলে নামাজ আদায় করতে হবে।

তাহাজ্জুদের নামাজের শেষ সময় হয়ে গেলে আমরা আর তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারবো না। তাই, আমাদের সবার উচিত তাহাজ্জুদ নামাজ এর সময় সূচি জেনে রাখা। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় এবং তাহাজ্জুদ নামাজের শেষ সময় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি, পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়বেন। তো চলুন, শুরু করা যাক।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

এশার নামাজ আদায় করার পর থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব অব্দি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়। তবে, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার উত্তম সময় হচ্ছে মধ্যরাত্রি। অর্থাৎ, বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী রাত ২ ঘটিকা থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগে অব্দি। তবে, যদি এমন শঙ্কা তৈরি হয় যে মধ্যরাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যাবে না, সেক্ষেত্রে, এশার নামাজ আদায় করার পর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নিতে হবে।

এশার নামাজ আদায় করার পর তাহাজ্জুদ আদায় করলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে, উত্তম সময় হচ্ছে মধ্যরাত্রি। রাতের শেষ ভাগে, অর্থাৎ, রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে হবে। তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার পর বিতরের নামাজ আদায় করতে হবে। এ প্রসঙ্গে জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন –

যে রাতের শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ আদায়ের ব্যাপারে আশঙ্কা করে, সে যেন রাতের প্রথম ভাগে বিতর নামাজ পড়ে নেয়। আর যে শেষ ভাগে জেগে নামাজ আদায়ে আশা রাখে, সে যেন রাতের শেষ অংশে বিতর আদায় করে। কেননা, রাতের শেষ ভাগে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে সাক্ষ্য রয়েছে এবং এটি সর্বোত্তম। (মুসলিম, হাদিস : ৭৫৫)

আরও পড়ুন – এশার নামাজের শেষ সময় | এশার নামাজের সময় শুরু ও শেষ

উপরোক্ত এই হাদিস থেকে বুঝা যায় তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার সর্বোত্তম সময় হচ্ছে রাত্রের শেষ সময়। তবে, কোনো কারণে যদি রাতের শেষ সময়ে তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারবেন না বলে মনে হয়, তবে সেক্ষেত্রে রাত্রের শুরুর দিকে নামাজ আদায় করে নিতে হবে। এশার নামাজ আদায় করার পর তাহাজ্জুদ এবং বিতর নামাজ আদায় করে নিতে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভ

তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা আল্লাহ্‌ তায়ালার নৈকট্য লাভ করা এবং আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের মনে সকল প্রার্থনা কবুল করে নেয়ার। অন্নান্ন্য নামাজের থেকে তাহাজ্জুদের নামাজের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্‌র কাছে অতি দ্রুত আমাদের দোয়া পৌঁছে দিতে পারি। এ প্রসঙ্গে আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন –

প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে আগমন করেন, এরপর বলেন- কে আছে আমার কাছে দোয়া করবে আর আমি তার দোয়া কবুল করবো? কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো? কে আছে আমার কাছে কোনো কিছু চাইবে আর আমি তাকে তা দেবো? (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৪/৪৬)

আরও পড়ুন – তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

মহান আল্লাহ রাতের নামাজের গুরুত্ব কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-

اِنَّ نَاشِئَۃَ الَّیۡلِ هِیَ اَشَدُّ وَطۡاً وَّ اَقۡوَمُ قِیۡلًا

‘নিশ্চয়ই রাতের বেলার জেগে ওঠা আত্মসংযমের জন্য বেশি কার্যকর এবং স্পষ্ট কথা বলার জন্য বেশি উপযোগী।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল : আয়াত ৬)

وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا –  وَ الَّذِیۡنَ یَبِیۡتُوۡنَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا

‘আর রাহমান-এর বান্দা তারাই, যারা জমিনে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেল ব্যক্তিরা তাদেরকে (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, সালাম; আর তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের রব-এর উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে এবং দাঁড়িয়ে থেকে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৩-৬৪)

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সুন্নত

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেছেন এবং আমাদের সবাইকে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে উপদেশ দিয়েছে। কারণ, তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার নৈকট্য লাভের সবথেকে সহজ উপায়। তাই, আমাদের সবার উচিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,

‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা হলো- সিয়ামে দাউদ, তিনি একদিন রোজা রাখতেন, আরেকদিন রোজা রাখতেন না। তিনি রাতের অর্ধেক ঘুমাতেন এবং এক তৃতীয়াংশ নামাজ আদায় করতেন। এরপর ছষ্ঠাংশ আবার ঘুমাতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪২০)

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন শুরু হয় এবং কখন শেষ হয়, তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছেন। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার পূর্বে আমাদের অবশ্যই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে হবে। নিচে আপনাদের জন্য তাহাজ্জুদের সালাতের নিয়ত উল্লেখ করে দিয়েছি। আপনি চাইলে বাংলায় কিংবা আরবিতে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে পারেন।

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُ اَكْبَر

অর্থ : দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি.. অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ পড়া।

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত

তাহাজ্জুদ নামাজ ২ রাকাত থেকে শুরু করে যেকোনো পরিমাণ রাকাত আদায় করা যাবে। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার জন্য ২ রাকাতের নিয়ত কিংবা ৪ রাকাতের নিয়ত করে নামাজ আদায় করা যাবে। ২ রাকাত করে ৮ রাকাত অব্দি কিংবা ৪ রাকাত করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা উত্তম। তবে, আপনি চাইলে এর থেকেও বেশি পরিমাণ আদায় করতে পারবেন। ২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা থেকে যেকোনো পরিমাণ আদায় করা যাবে।

আরও পড়ুন – তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ও নামাজের নিয়ত

অনেকের কাছে মনে হতে পারে যে, ২ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করলে তা তাহাজ্জুদ বলে গন্য হবে না। তবে, আমরা ২ রাকাত থেকে শুরু করে যেকোনো পরিমাণ রাকাত নামাজ আদায় করতে পারি। তাহাজ্জুদের নামাজ আপনার সময় এবং ইচ্ছেমতো আদায় করতে পারেন।

আমাদের শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় এবং তাহাজ্জুদ নামাজের শেষ সময় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য ও আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, আপনার অনেক উপকারে আসবে। এমন আরও ইসলামিক পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আল্লাহ্‌ হাফেয।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment