গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি

গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি এই বিষয় নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের উচিত সর্বদা পাক-পবিত্র থাকা। পাক-পবিত্র থাকার জন্য আমাদের সবাইকে সঠিক নিয়মে গোসল করা জানতে হবে। গোসল সহিহভাবে করতে না পারার কারণে অনেকেই অপবিত্র থেকে যান।

গোসল ফরজ হওয়ার পর ফরজ গোসল না করা হলে, নামাজ, রোজা সহ কোনো ইবাদত কবুল হবে না। ফরজ গোসল করার জন্য অবশ্যই গোসলের ফরজ জানা জরুরী। ফরজ গোসল করার জন্য অবশ্যই গোসলের ফরজ জানতে হবে। অনেকেই গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি জানেন না। তাই, আপনাদের সাথে আজ আলোচনা করবো, গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি এই বিষয় নিয়ে।

গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি
গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি

গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি

গোসলের ফরজ তিনটি। এগুলো হচ্ছে, কুলি করা, নাকের ভেতর পানি দেওয়া এবং পুরো শরীর ধৌত করা। গড়গড়া করে কুলি করা, নাকের নরম অংশ অব্দি পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা এবং পুরো শরীর ধৌত করা, যেন শরীরের কোনো অংশ শুকনা না থাকে।

গোসলের এই তিনটি ফরজ না মেনে যদি গোসল করা হয়, তবে সেই গোসল হবে না। অর্থাৎ, পাক-পবিত্র হওয়ার লক্ষে গোসল করতে চাইলে গোসলের এই ফরজগুলো না মানলে গোসল হবে না। গোসল ফরজ হওয়ার পর যদি গোসল না করা হয়, তবে কোনো ইবাদত কবুল হবে না এবং আমরা গুনাহগার হবো। তাই, ইবাদত করার আগে অবশ্যই ফরজ গোসল করতে হবে।

নামাজ আদায় করার প্রধান শর্ত হচ্ছে, শরীর পাক রাখা। শরীর পাক না থাকলে নামাজ হবে না। আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের দোয়া/মুনাজাত করার সবথেকে সরাসরি মাধ্যম নামাজ যদি কবুল না হয়, তবে আমাদের অন্নান্ন্য কোনো ইবাদত কবুল হবে না। অনেকেই সারাজীবন গোসল সঠিকভাবে না করার কারণে তাদের ইবাদত কবুল হয় না।

জেনে শুনে এই ভুল করা থেকে আমাদের উচিত বিরত থাকা।

গোসলের ফরজ কি কি

গোসলের ফরজ তিনটি। এগুলো হচ্ছে –

  • কুলি করা
  • নাকের ভিতর পানি দেয়া
  • পুরো শরীর ধৌত করা

উপরোক্ত এই তিনটি ফরজ না মেনে গোসল করা হলে সেটি উত্তমরূপে গোসল করা হবে না এবং গোসল না হলে আমরা অপবিত্র রয়ে যাবো। পবিত্র হওয়ার লক্ষে গোসল করার পর যদি আমরা অপবিত্রই রয়ে যাই, তবে আমাদের ইবাদত কবুল হওয়ার পরিবর্তে গুনাহ হবে। তাই, গোসলের ফরজ মেনেই গোসল করতে হবে।

ভালোভাবে কুলি করা

মুখে পানি নিয়ে গড়গড়া সহিত কুলি করতে হবে। কুলি এমনভাবে করতে হবে যেন, মুখের ভিতর কোনো খাবার, কফ বা অন্য কোনো পদার্থ থাকলে তা কুলির পানির সাথে বের হয়ে যায়। গোসলের প্রথম ফরজ হচ্ছে গড়গড়া সহিত কুলি করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ফরজ গোসলের অংশ হিসেবে কুলি করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৭ ও ২৬৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৬৬)

নাকের ভিতর পানি দেয়া

নাকের ভিতর পানি দিতে হবে, পানি যেন নাকের নরম অংশ অব্দি পৌঁছায়। এতে করে, নাকের ভিতরে থাকা সকল ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবে। বাতাসে নাকের ভিতর অনেক ময়লা জমে যায়। গোসল করার সময় নাকে পানি দিয়ে এসব ময়লা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নাকে পানি দিয়েছেন। এ সম্পর্কিত একাধিক হাদিস বর্ণিত রয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৬৬)

পুরো শরীর ধৌত করা

পুরো শরীর ধৌত করতে হবে যেন শরীরের কোনো অংশ শুকনা না থাকে। শরীরে যদি চুল পরিমাণ অংশ শুকনা থাকে, তবে গোসল হবে না। তাই, গোসল করার সময় অবশ্যই শরীরের সব অংশ সুন্দর করে পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস রয়েছে। সেসব হাদিস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন গোসল করতেন, তখন তার শরীরের সব অংশ ভেজা থাকতো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭)

আরও পড়ুন – বিতর নামাজের নিয়ম এবং বিতর নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জেনে নিন

গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন আশা করছি।

গোসল কখন ফরজ হয়

মূলত পাঁচটি কারণে গোসল ফরজ হয়। গোসল ফরজ হওয়ার পর গোসল না করলে গুনাহ হয়। এছাড়া, গোসল ফরজ হয়েছে কিন্তু গোসল করা হয়নি, এমতাবস্থায় কোনো ইবাদত করা হলে ইবাদত কবুল হবে না। গোসল ফরজ হওয়ার কারণগুলো হচ্ছে –

  • স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে কিংবা পুরুষের স্বপ্নদোষ হলে।
  • নারীদের ঋতুস্রাব অথবা পিরিয়ড হলে।
  • সন্তান প্রসবের পর রক্তপাত বন্ধ হলে।
  • মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের জন্য।
  • কোনো অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে।

গোসল কখন সুন্নত হয়

কিছু ক্ষেত্রে আমাদের জন্য গোসল করা সুন্নত হয়। ফরজ গোসল না করলে যেমন আমাদের গুনাহ হয়, সুন্নত গোসল না করলে কোনো গুনাহ হয় না। তবে, সুন্নত গোসল না করলে আমরা সুন্নত আদায় করা থেকে বঞ্চিত হবো। যেসব ক্ষেত্রে গোসল করা সুন্নত হয়, এগুলো হচ্ছে –

  • জুমার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত।
  • ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত। 
  • ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত।
  • হাজীদের আরাফায় অবস্থানের সময় গোসল করা সুন্নত।

গোসলের সুন্নত

গোসল করার সময় ফরজগুলো মানার পাশাপাশি সুন্নত গুলো আদায় করতে হবে। অনেকেই গোসলের সুন্নত কয়টি ও কি কি জানেন না। তো চলুন, গোসলের সুন্নত কয়টি এবং কি কি জেনে নেয়া যাক।

গোসলের সুন্নত মূলত ৬টি। গোসলের সুন্নতগুলো হচ্ছে –

  • পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা।
  • গোসল শুরুর আগে ‘বিসমিল্লাহ রাহমানির রাহিম’ পাঠ করা।
  • দুই হাতের কব্জি ওযুর মতো তিনবার পরিষ্কার করা।
  • কাপড় অথবা শরীরের কোথাও অপবিত্র কোনো কিছু থাকলে— গোসলের আগে তা পরিষ্কার করা।
  • গোসলের আগে অজু করা। গোসলের স্থান নিচু হলে ও পানি জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে টাখনুসহ দুই পা পরে পরিষ্কার করা।
  • ডান দিকে তিনবার, বাম দিকে তিনবার ও মাথার ওপর তিনবার পানি প্রবাহিত করা।

গোসল করার সময় এসব সুন্নত অবশ্যই পালন করতে হবে। সুন্নত অনুসরণ করে গোসল না করলে পাপ হবে না, তবে আমরা সুন্নত পালন করা থেকে বঞ্চিত হবো। তাই, গোসল করার সময় অবশ্যই এসব সুন্নত মেনে গোসল করতে হবে।

গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি – FAQ

গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি?

গোসলের ফরজ ৩টি। এগুলো হচ্ছে – গড়গড়া করে কুলি করা, নাকের ভিতর পানি দেয়া এবং পুরো শরীর ধৌত করা।

গোসলের সুন্নত কয়টি?

গোসলের সুন্নত ৬টি।

গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি সম্পর্কে শেষ কথা

আমাদের আজকের পোষ্টে আমরা আলোচনা করেছি গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি সেই সম্পর্কে। আশা করি আপনারা গোসলের ফরজ সম্পর্কিত সকল তথ্যাদি জানতে পেরেছেন। যদি গোসলের ফরজ সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আর পোষ্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আশা করি উপকার হবে। ধন্যবাদ।।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment