meswak korar niyom । মেসওয়াক করার নিয়ম

মেসওয়াক করার নিয়ম

meswak korar niyom । মেসওয়াক করার নিয়ম-ইসলামী জীবনধারার প্রতিটি দিকেই রয়েছে শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।” (সহীহ মুসলিম)। এই পরিচ্ছন্নতারই একটি অন্যতম উপকরণ হলো

মেসওয়াক। এটি শুধু দাঁত পরিষ্কার করার একটি পদ্ধতি নয়, বরং এটি একটি সুন্নাহ যা নবীজি (সা.) নিজ জীবনে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করতেন।

মেসওয়াক কী?

মেসওয়াক হলো একটি প্রাকৃতিক টুথব্রাশ যা সাধারণত আরাক গাছের (Salvadora persica) শাখা থেকে তৈরি করা হয়। এটি আরবি ভাষায় “সিওয়াক” নামেও পরিচিত। নবীজি (সা.) প্রায় প্রতিদিন এটি ব্যবহার করতেন।

meswak korar niyom । মেসওয়াক করার নিয়ম

. মেসওয়াক ব্যবহারের সময়:

  • ওযুর সময়
  • নামাজের আগে
  • ঘুম থেকে উঠার পরে
  • মসজিদে প্রবেশের আগে
  • কুরআন পড়ার আগে

. মেসওয়াক ব্যবহারের নিয়ম:

  • ডান হাতে মেসওয়াক ধরা
  • মেসওয়াককে দৈর্ঘ্য বরাবর (আড়াআড়ি নয়) দাঁতের উপর ঘষা
  • উপরের দাঁতে ডান দিক থেকে বাম দিকে ঘষা এবং নিচে বাম দিক থেকে ডানে
  • মেসওয়াক ব্যবহারের পর ধুয়ে ফেলা
  • সপ্তাহে একাধিকবার মেসওয়াকের আগা কেটে নতুন করে তৈরি করা

. মেসওয়াক ব্যবহারে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি:

  • মেসওয়াক নরম হওয়া উচিত
  • তিক্ততা না থাকলে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখা
  • মেসওয়াক ব্যবহার শেষে পরিষ্কার ও শুকনো স্থানে রাখা

ইসলামিক দৃষ্টিতে মেসওয়াকের

গুরুত্ব

নবীজি (সা.) বলেছেন:

“যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না মনে করতাম তবে আমি তাদের প্রত্যেক ওযুর সময় মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম।” (বুখারী, মুসলিম)

এ থেকে বোঝা যায়, মেসওয়াক ইসলামে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি নামাজের প্রস্তুতির অংশ এবং মুখের পবিত্রতা রক্ষায় সহায়ক।

মেসওয়াক করার উপকারিতা

স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

মেসওয়াক শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, এটি স্বাস্থ্যের দিক থেকেও অনেক উপকারী। যেমন:

  • দাঁতের প্লাক দূর করে
  • মাড়ি মজবুত করে
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
  • দাঁতের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে
  • দাঁতের এনামেল রক্ষা করে
  • প্রাকৃতিকভাবে দাঁত সাদা করে

আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে?

বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মেসওয়াকে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান যেমন:

  • সালভাডোরিন (Salvadorine)
  • ফ্লোরাইড
  • সিলিকা
  • অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান

এসব উপাদান দাঁতের জন্য কার্যকর এবং অনেক সময় বাজারের টুথপেস্ট থেকেও বেশি উপকারী। একটি স্টাডি অনুযায়ী (https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/) মেসওয়াক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।

মেসওয়াক করার দোয়া

মেসওয়াক করার সময় একটি বিশেষ দোয়া পড়া সুন্নত হিসেবে বিবেচিত হয়, যা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মেসওয়াক মুখ দাঁত পরিষ্কার রাখার একটি সুন্নতি পদ্ধতি, যা শুধু শারীরিকভাবে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে না, বরং আত্মিক পবিত্রতার প্রতীকও বটে। মেসওয়াক করার পূর্বে দোয়াটি পড়া উচিত:

“اللّهُمَّ بَيِّضْ لِى فِيهِ وَجْهِى، اللّهُمَّ بَارِكْ لِى فِيهِ، اللّهُمَّ أَسْأَلُكَ رِيحَ الجَنَّةِ وَطِيبَهَا”

এই দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করা, মেসওয়াকের মাধ্যমে বরকত লাভ এবং জান্নাতের সৌরভ প্রার্থনা করি। এই দোয়া পড়ে মেসওয়াক করলে তা শুধু সুন্নতের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে না, বরং একটি ইবাদতের রূপ লাভ করে।

মিসওয়াক করা কি সুন্নত?

মিসওয়াক করা সুন্নত এবং এটি প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। হাদীস অনুযায়ী, তিনি ওযু করার সময় এবং নামাজের পূর্বে নিয়মিতভাবে মিসওয়াক করতেন। মিসওয়াক ব্যবহারে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার থাকে এবং এতে আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জিত হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যদি আমি আমার উম্মতের উপর কষ্টকর না মনে করতাম, তবে প্রত্যেক নামাজের পূর্বে মিসওয়াক করা তাদের জন্য ফরজ করে দিতাম” (সহীহ বুখারী)। তাই মিসওয়াক করা একটি নিশ্চিত সুন্নত যা শরীরিক পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি আত্মিক পবিত্রতাও বৃদ্ধি করে।

meswak korar niyom । মেসওয়াক করার নিয়ম-প্রশ্নোত্তর (FAQs)

প্রশ্ন: প্রতিদিন কতবার মেসওয়াক করা উচিত?

উত্তর: দিনে অন্তত ৫ বার (প্রতিটি নামাজের সময়) মেসওয়াক করা সুন্নাহ।

প্রশ্ন: মেসওয়াক কি টুথব্রাশের বিকল্প হতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, মেসওয়াক নিজেই একটি প্রাকৃতিক টুথব্রাশ। তবে আপনি চাইলে টুথব্রাশের সাথেও ব্যবহার করতে পারেন।

প্রশ্ন: মেসওয়াক ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?

উত্তর: না, যদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা হয় তাহলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

প্রশ্ন: বাজারে পাওয়া কৃত্রিম মেসওয়াক কি ব্যবহার করা যায়?

উত্তর: চেষ্টা করুন প্রকৃত আরাক গাছের মেসওয়াক ব্যবহারে অগ্রাধিকার দিতে। তবে অন্য বিকল্প থাকলে গবেষণা করে ব্যবহার করুন।

meswak korar niyom । মেসওয়াক করার নিয়ম- শেষ কথা

মেসওয়াক শুধু একটি সুন্নাহ নয়, এটি একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। ইসলাম যেভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব দেয়, তেমনি মেসওয়াক তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আধুনিক বিজ্ঞানও এই সুন্নাহর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। সুতরাং, আমাদের উচিত নিয়মিত মেসওয়াক ব্যবহার করে মুখগহ্বরের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং এই সুন্নাহ বাস্তবায়ন করা।

আরও পড়ুন: 

ফরজ গোসলের নিয়ম ও নিয়ত
গোসল ফরজ হওয়ার কারণ
গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি?

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment