আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি এবং আলহামদুলিল্লাহ কখন বলতে হয় এটা অনেকেই জানেন না। তাই, আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ এবং আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন এবং আলামদুলিল্লাহ বলার সাওয়াব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
আলহামদুলিল্লাহ একটি আরবি শব্দ। এই শব্দের অর্থ অনেকেরই অজাশব্দ নিয়ে কিছু কথানা। তো চলুন, আলহামদুলিল্লাহ কেন বলা হয় এবং আপনি কেন আলহামদুলিল্লাহ বলার অভ্যাস করবেন এই বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা যাক।
আলোচ্য সূচি:
আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি
আলহামদুলিল্লাহ (ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ) একটি আরবি বাক্য যা “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য” হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাক্যাংশ যা মুসলমানরা তাদের জীবনের বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করে। ধন্যবাদ প্রকাশ করতে, বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করা যেতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ বলার অনেক উপকারিতা রয়েছে।
Also Read

আল্লাহ্র দেয়া নিয়ামত ভোগ করার পর আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহ্র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং আল্লাহ্র মাহাত্ম্য স্বীকার করে নেয়া হয়। আল্লাহ্ তায়ালা পুরো মহাজগত আমাদের জন্য তৈরি করেছেন। পৃথিবীতে মানুষের বসবাসের জন্য অনেক কিছু তৈরি করেছেন। এ সকল উপাদান দিয়েই আমরা আমাদের জীবন পরিচালনা করছি।
তাই, আল্লাহ্র এই অশেষ নিয়ামত ভোগ করার পর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমাদের উচিত আলহামদুলিল্লাহ বলা। আলহামদুলিল্লাহ বলা অনেক সুন্দর একটি অভ্যাস। এতে করে রুজির উপর বরকত বাড়ে। আলহামদুলিল্লাহ পড়লে অনেক সাওয়াব হয়।
আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ কি
আলহামদুলিল্লাহ (আরবি: ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ, al-Ḥamdu lillāh) একটি আরবি শব্দ যার অর্থ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর। কখনও কখনও আল্লাহকে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য, আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য, আল্লাহ্র দেয়া নিয়ামত ভোগ করে শুকরিয়া আদায় করার জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আমি যদি আজ একটি চাকুরি পাই, তবে বলবো, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ্র অশেষ রহমতে একটি চাকুরি পেয়েছি। এটি বলার মাধ্যমে আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করা হয়েছে। আবার, দুপুরের খাবার খাওয়ার পর কিংবা রাতের খাবার খাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ বলা হলে আল্লাহ্র দেয়া নিয়ামত এর উপর শুকরিয়া আদায় করা হয়। এতে করে, আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের উপর রহমত বৃদ্ধি করে দেন।
কোনো কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হলেও আলহামদুলিল্লাহ বলা হয়। এতে করে, আল্লাহ্র মাহাত্ম্য স্বীকার করে নেয়া হয়। এই শব্দটি মুসলমানদের দ্বারা প্রায়শই ব্যবহৃত হয়, মুসলমানদের যেকোনো ভালো কাজের শেষে এই দোয়া পড়া আবশ্যক। এটি সাধারণত আরব খ্রিস্টান এবং আরবি ভাষার অন্যান্য অ-মুসলিম বক্তারাও ব্যবহার করেন।
আলহামদুলিল্লাহ কখন বলতে হয়
আলহামদুলিল্লাহ বলে একজন মুসলমান আল্লাহর প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। যখন একজন মুসলমান আলহামদুলিল্লাহ বলে, তখন সে আল্লাহর সমস্ত নিয়ামতগুলির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। যেমন তার জীবন, তার স্বাস্থ্য, তার পরিবার, তার সম্পদ এবং আরও অনেক কিছু।

আলহামদুলিল্লাহ বলা সাওয়াবের কাজ। এটি মুসলমানদেরকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস শক্তিশালী করতে এবং তাঁর দেয়া নিয়ামতগুলির জন্য তাঁর প্রশংসা করতে সাহায্য করে। এটি মুসলমানদেরকে ধৈর্যশীল এবং আশাবাদী হতেও সাহায্য করে।
আলহামদুলিল্লাহ বলার অনেকগুলি সুবিধা রয়েছে। এটি মুসলমানদেরকে:
- আল্লাহর নিয়ামত ভোগ করে শুকরিয়া আদায় করতে সাহায্য করে।
- আল্লহার কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে সাহায্য করে।
- ধৈর্যশীল এবং আশাবাদী হতে সাহায্য করে।
- নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আবেগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
আলহামদুলিল্লাহ বলা একটি খুবই সহজ কাজ, কিন্তু এটি ফলপ্রসূ। মুসলমানদের উচিত সবসময় আলহামদুলিল্লাহ বলার চেষ্টা করা, বিশেষ করে যখন তারা আল্লাহর দেয়া নিয়ামতগুলি উপভোগ করে। খাওয়ার সময়, কোনো ভালো খবর পাওয়ার পর, আলহামদুলিল্লাহ বলার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
আলহামদুলিল্লাহ এর জবাবে কি বলতে হয়
কেউ যদি আপনার সামনে আলহামদুলিল্লাহ বলে, তবে আপনিও তার সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারেন। অথবা, আপনি যদি কিছু না বলেন, তবু সমস্যা নেই। তবে, কারও থেকে আলহামদুলিল্লাহ শোনার পর নিজেও আলহামদুলিল্লাহ বলা একটি ভালো অভ্যাস।
মাশাআল্লাহ অর্থ কি? মাশাআল্লাহ কখন বলতে হয়?
হাচি দেয়ার সময় আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়। কেউ যদি আপনার সামনে হাচি দেয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ বলে, এবং আপনি শুনেন, তবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলতে হবে। কেউ হাচি দিয়ে যদি আলহামদুলিল্লাহ না পড়ে, তবু আপনাকে ইয়ারহামুকাল্লাহ পড়তে হবে।
আলহামদুলিল্লাহ শব্দ নিয়ে কিছু কথা
সূরা ফাতিহার ফজিলত সম্পর্কে আপনার নিশ্চয়ই ধারণা আছে। সূরা ফাতিহা (ফাতিহা) হলো কুরআনুল কারিমের প্রথম সূরা। এটি একটি ছোট্ট সূরা, কিন্তু এর ফজিলত অনেক। সূরা ফাতিহাকে কুরআনের সারমর্ম বলা হয়। এটিতে আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া, ক্ষমা চাওয়া এবং জান্নাতের সুসংবাদের কথা বলা হয়েছে।
সূরা ফাতিহার অনেক ফজিলত রয়েছে। এটি পাঠ করলে নামাজ পূর্ণ হয়। এটি পাঠ করলে আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ লাভ হয়। এটি পাঠ করলে জান্নাতের পথ সুগম হয়। এটি পাঠ করলে রোগ থেকে মুক্তি হয়। এটি পাঠ করলে শত্রুদের পরাজিত করা হয়। এটি পাঠ করলে দুঃখ ও কষ্ট দূর হয়।
সূরা ফাতিহা মিলিয়ে প্রতি রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। নিম্নে সূরা ফাতিহার কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে দিলাম।
- সূরা ফাতিহা পাঠ করলে আল্লাহর রহমত ও করুণা লাভ হয়।
- সূরা ফাতিহা পাঠ করলে নামাজ কবুল হয়।
- সূরা ফাতিহা পাঠ করলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করলে অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ হয়।
- সূরা ফাতিহা পাঠ করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়।
- সূরা ফাতিহা পাঠ করলে শত্রুদের থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- এই সূরা পাঠ করলে মৃত্যুর সময় সহজ হয়।
অবাক হচ্ছেন, আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সূরা ফাতিহা নিয়া কেন আলোচনা করছি? সূরা ফাতিহার শুরুর শব্দটি হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ সূরার এতো ফজিলত হলে, আলহামদুলিল্লাহ শব্দের নিয়ামত কতো? এজন্য, কোনো খুশির খবর পেলে কিংবা আল্লাহ্ প্রদত্ত কোনো নিয়ামত ভোগ করলে অবশ্যই শুকরিয়া আদায় করার জন্য আলহামদুলিল্লাহ পড়তে হবে।
এতে করে আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের উপর খুশি হন এবং রহমত বর্ষণ করেন। খাওয়া শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা হলে, আল্লাহ্ তায়ালা রিজিক এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেন। তাই, বেশি বেশি আলহামদুলিল্লাহ পড়ার অভ্যাস করতে হবে।
আমাদের শেষ কথা
ফেরদাউস একাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি এবং আলহামদুলিল্লাহ কখন বলতে হয় এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকলে আলহামদুলিল্লাহ শব্দ কখন বলতে হবে এবং আলহামদুলিল্লাহ শব্দের উত্তরে কী বলতে হবে জানতে পেরেছেন। এমন আরও ইসলামিক পোস্ট পড়তে ইসলাম ও জীবন ক্যাটাগরি ভিজিট করতে পারেন।