মিনি কম্পিউটার কাকে বলে? মিনি কম্পিউটারের জনক কে? এর বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার

মিনি কম্পিউটার কাকে বলে এবং মিনি কম্পিউটারের জনক কে ও মিনি কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার নিয়ে আজকের এই পোস্ট। আপনি যদি মিনি কম্পিউটার সম্পর্কে তেমন তথ্য না জেনে থাকেন, তবে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। এতে করে মিনি কম্পিউটার বিষয়ক সকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন।

আধুনিক যুগে যেকোনো কাজ করতে গেলেই আমরা কম্পিউটারের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। গান শোনা, রেডিও শোনা, ভিডিও দেখা, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা সহ অনেক কাজেই আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করি। একটি বড় রুমের সমান যেমন কম্পিউটার রয়েছে, আবার তেমনি হাতের মুঠোয় ব্যবহার করার মতো কম্পিউটার রয়েছে।

আজকের এই পোস্টের টপিক হচ্ছে মিনি কম্পিউটার। মিনি কম্পিউটার কাকে বলে, কত প্রকার, মিনি কম্পিউটারের জনক কে এবং এই কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আপনাদের সাথে। অনেকেই মিনি কম্পিউটার সম্পর্কে তেমন অবগত নন। আশা করছি, পোস্টটি আপনার জন্য অনেক সহায়ক হবে। তো চলুন, শুরু করা যাক।

মিনি কম্পিউটার কাকে বলে
মিনি কম্পিউটার কাকে বলে

মিনি কম্পিউটার কি?

মিনি কম্পিউটার হলো এক ধরনের কম্পিউটার যা মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে ছোট কিন্তু মাইক্রো কম্পিউটারের চেয়ে বড়। এগুলি ১৯৬০-এর দশকে প্রথম প্রবর্তিত হয়েছিল এবং ১৯৭০-এর দশকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মিনি কম্পিউটারগুলি সাধারণত একটিই কক্ষে রাখা যেত এবং একাধিক ব্যবহারকারী একই সময়ে এটি ব্যবহার করতে পারতো। এগুলি বড় ব্যবসায় এবং সরকারি সংস্থাগুলিতে ব্যবহৃত হত।

১৯৮০-এর দশকে মাইক্রো কম্পিউটারের উত্থানের সাথে সাথে মিনি কম্পিউটারগুলির জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে শুরু করে। মাইক্রো কম্পিউটার মিনি কম্পিউটারের তুলনায় আরও ছোট, কম ব্যয়বহুল এবং ব্যবহার করা সহজ। বর্তমানে, মিনি কম্পিউটার খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না। তবে, কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে, যেমন বড় ব্যবসায় এবং সরকারি সংস্থাগুলিতে, মিনি কম্পিউটার এখনও ব্যবহৃত হয়।

মিনি কম্পিউটার কাকে বলে?

মেইলফ্রেম কম্পিউটারে থেকে ছোট কিন্তু মাইক্রো কম্পিউটার চেয়ে বড় যেসব কম্পিউটার, তাকে মিনি কম্পিউটার বলে। মিনি কম্পিউটার মূলত একটি রুমে রাখা যায়। ১৯৮০ এর দশকের দিকে মিনি কম্পিউটারের থেকে আরও ছোট মাইক্রো কম্পিউটার বের হয়। যা মিনি কম্পিউটারের তুলনায় অধিক জনপ্রিয় হয়ে পড়ে। কারণ, মাইক্রো কম্পিউটার ব্যবহার করা সহজ, কম ব্যয়বহুল এবং পরিসরে অনেক ছোট।

মিনি কম্পিউটারের জনক কে?

মিনি কম্পিউটারের জনক হচ্ছেন কেনেথ এইচ ওলসেন। তিনি ১৯৬০ সালে ডিজিটাল ইকোনমিকস কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৬৫ সালে তাদের প্রথম মিনি কম্পিউটার, ডিজিটাল ২১০০-টি চালু করেন। ডিজিটাল ২১০০ ছিল একটি সাফল্য এবং এটি অন্যান্য কোম্পানিকে মিনি কম্পিউটার তৈরিতে অনুপ্রাণিত করে। ১৯৭০-এর দশকে, মিনি কম্পিউটারগুলি ব্যবসায় এবং প্রতিষ্ঠানগুলিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।

মিনি কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

মিনি কম্পিউটার হলো এক ধরনের কম্পিউটার যা মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে ছোট কিন্তু মাইক্রো কম্পিউটারের চেয়ে বড়। এগুলো ১৯৬০-এর দশকে উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং ১৯৭০-এর দশকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মিনি কম্পিউটার সাধারণত একটি ডেস্কের উপরে রাখা যেত এবং কয়েকজন ব্যবহারকারী একই সাথে এটি ব্যবহার করতে পারত। মিনি কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় এবং প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হত, যেমন ব্যাংক, হাসপাতাল, উৎপাদন কারখানা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন – কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কি কি?

মিনি কম্পিউটার ১৯৭০ এর দশকে চালু হওয়ার পর অনেকেই এগুলো ব্যবহার করা শুরু করে। কারণ, মিনি কম্পিটারের বৈশিষ্ট্য ছিলো অনেক বেশি। নিচে এগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে দিলাম।

মিনি কম্পিউটারের কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে :

  • এগুলি মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে ছোট এবং সস্তা।
  • কয়েকজন ব্যবহারকারী একই সাথে ব্যবহার করতে পারে।
  • বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার চালাতে পারে।
  • বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করা যায়।

মিনি কম্পিউটারের অনেক সুবিধা রয়েছে। একারণে তৎকালীন সময়ে এসব কম্পিউটার অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এছাড়াও, এখনও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মিনি কম্পিউটার ব্যবহার হয়ে আসছে। মিনি কম্পিউটারগুলির সুবিধা হলো :

  • এগুলি মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে কম দামে পাওয়া যেতো।
  • কয়েকজন ব্যবহারকারী একই সাথে এই কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে।
  • বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার চালাতে সক্ষম।
  • মিনি কম্পিউটারের সাথে বিভিন্ন ধরণের ডিভাইস যুক্ত করে ব্যবহার করা যায়।

মিনি কম্পিউটারের সুবিধার পাশাপাশি অনেক অসুবিধাও রয়েছে। এগুলো হচ্ছে –

  • এগুলি মেইনফ্রেম কম্পিউটারের মতো শক্তিশালী নয়।
  • এগুলি মেইনফ্রেম কম্পিউটারের মতো নির্ভরযোগ্য নয়।
  • এগুলি মেইনফ্রেম কম্পিউটারের মতো বেশি পরিমাণে তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে না।

১৯৮০-এর দশকে মাইক্রো কম্পিউটারগুলির উত্থানের সাথে সাথে মিনি কম্পিউটারগুলির জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। তবে, এখনও কিছু ব্যবসায় এবং প্রতিষ্ঠানে মিনি কম্পিউটারগুলি ব্যবহৃত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে মিনি কম্পিউটারের জনপ্রিয়তা এখনো রয়েছে। তবে, মাইক্রো কম্পিউটার আকারে ছোট, দামে কম হওয়ার কারণে এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছে।

মিনি কম্পিউটার ও মাইক্রো কম্পিউটারের পার্থক্য

মিনি কম্পিউটার মাইক্রো কম্পিউটারের থেকে আকারে বড় ছাড়াও এদের মাঝে আরও কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। Mini Computer এখন তেমন দেখা যায় না। তাই, আমরা সচক্ষে মাইক্রো কম্পিউটারের সাথে এর পার্থক্য বুঝতে পারবো না। তবে, নিচে একটি টেবিল তৈরি করে দিয়েছি, যার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন মিনি ও মাইক্রো কম্পিউটারে আসল পার্থক্য।

পার্থক্য মিনি কম্পিউটার মাইক্রো কম্পিউটার
 ১. আকার ১. মাইক্রো কম্পিউটারের চেয়ে আকারে বড়। ১. মিনি কম্পিউটারের চেয়ে আকারে ছোট।
 ২. গতি ও কর্ম দক্ষতা ২. মাইক্রো কম্পিউটারের চেয়ে গতি ও কর্ম দক্ষতা বেশি। ২. মিনি কম্পিউটারের চেয়ে গতি ও কর্ম দক্ষতা অনেক কম।
 ৩. মূল্য ৩. মাইক্রো কম্পিউটারের চেয়ে মূল্য অনেক বেশি। ৩. মিনি কম্পিউটারের চেয়ে মূল্য অনেক কম।
 ৪. টার্মিনাল ৪. একাধিক টার্মিনাল সংযোগ করা যায়। ৪. কোন টার্মিনাল সংযোগ করা যায় না।
 ৫. ব্যবহারকারী ৫. একই সঙ্গে একাধিক ব্যবহারকারী টার্মিনালের মাধ্যমে কাজ করতে পারে। ৫. একই সময়ে একজনমাত্র কাজ করতে পারে।
 ৬. পরিচালনা ও রক্ষাবেক্ষণ ৬. পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ মাইক্রো কম্পিউটারের চেয়ে বেশি। ৬. পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ মিনি কম্পিউটারের চেয়ে অনেক কম।
মিনি কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

মিনি কম্পিউটারের ব্যবহার

মিনি কম্পিউটার আবিস্কার হওয়ার পর থেকে অনেকেই বিভিন্ন কাজে এই কম্পিউটার ব্যবহার করে আসছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিনি কম্পিউটার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অধ্যয়ন, নোট লেখা, অনলাইন শিক্ষামূলক সেবা, এবং প্রস্তুতির কাজে যেমন সহায়ক হতে পারে, তেমনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, প্রজেক্ট বা প্রোটোটাইপ তৈরির জন্য মিনি কম্পিউটার ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও, অনেক ব্যবসায়িক কাজে এখনো মিনি কম্পিউটার ব্যবহার হয়ে আসছে।

ব্যাংক-বিমা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও মিনি কম্পিউটারের ব্যবহার হয়ে থাকে। মিনি কম্পিউটারের কিছু উদাহরণ হচ্ছে – IBM S/34, PDPII, NCR S/9290 ইত্যাদি।

আমাদের শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে মিনি কম্পিউটার কাকে বলে, মিনি কম্পিউটারের জনক কে এবং এর বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি, পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। এতে করে মিনি কম্পিউটার সম্পর্কে আপনার ধারণা আরও বিস্তৃত হবে। কম্পিউটার বিষয়ক এমন আরও পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

Leave a Comment