মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা কী কী এই বিষয় নিজে আজকের এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরব। মরিয়ম খেজুর খেলে আমাদের শরীরে কী কী উপকার হয় এবং আমাদের কেন মরিয়ম খেজুর খাওয়া উচিত তা নিয়ে অনেকের মাঝেই বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে মরিয়ম খেজুরের উপকারীতা ও বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন।

আজওয়া খেজুরের উপকারিতার মতো মরিয়ম খেজুরের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেকোনো জাতের খেজুর খেলেই তা আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা সমূহ নিয়ে। চলুন, শুরু করা যাক।

মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা

মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা
মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা

মরিয়ম খেজুর হল এক ধরনের খেজুর যা মধ্যপ্রাচ্যে জন্মায়। এই খেজুরটি উচ্চ পুষ্টিমান এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য পরিচিত। মরিয়ম খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, এবং ফাইবার রয়েছে। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং আয়রন এর জন্য মরিয়ম খেজুর একটি ভালো উৎস। মরিয়ম খেজুরের উপকারিতাগুলোর মাঝে রয়েছে –

  • হাড় মজবুত করে: মরিয়ম খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে এবং হাড়ের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
  • উচ্চ রক্তচাপ কমায়: মরিয়ম খেজুরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তনালীগুলিকে শিথিল করে, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: মরিয়ম খেজুরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ফাইবার থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ। ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের আরেকটি প্রধান কারণ।
  • ত্বকের যত্নে খেজুর – বয়সের ছাপ প্রথমে ত্বকেই ধরা পড়ে। তাই ত্বকের যত্নে খেজুর কাজে লাগাতে পারেন। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচায়। ত্বকের নানা সমস্যা থেকেও খেজুর মুক্তি দেয়। ত্বকের বলি রেখা নিয়ন্ত্রণ করতেও খেজুর সিদ্ধহস্ত। এ ছাড়া ত্বকের ফ্যাকাশে ভাব ও হরমোনের সমস্যা কমাতে খেজুর কার্যকর।
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: মরিয়ম খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে দেয়, যা খাবার দ্রুত হজম করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে সাহায্য করে।
  • শক্তি বাড়ায়: মরিয়ম খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি এবং শর্করা থাকে, যা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ৭টি খেজুর খান, তবে তা আপনাকে সারাদিন অনেক শক্তিশালী এবং চঞ্চল রাখবে। যা আপনার শরীরের উন্নতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
  • দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে – বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫। এ ছাড়া ভিটামিন এ১ এবং সিসহ সব ধরণের ভিটামিন রয়েছে খেজুরে। এসব ভিটামিন আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি এবং প্রখর করতে সাহায্য করে। রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খেজুর খাওয়া অনেক ভালো একটি অভ্যাস। নিয়মিত খেজুর খেলে প্রবীণ বয়সে চোখের সমস্যা হবে না এবং শরীর থাকবে যৌবনের ন্যায় সুঠাম।
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী: মরিয়ম খেজুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রয়োজনীয়। আয়রন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা।

আরও পড়ুন – ঢাকা টু রাজশাহী ট্রেনের সময়সূচী

  • রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি – নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খেজুর বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় অনেক দ্রুত কাজ করে। খাবার হজম করতে এবং যকৃতের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খেজুর অনেক উপকারী।
  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্বাস্থ্য: মরিয়ম খেজুরতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে, যা হজম স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: মরিয়ম খেজুরে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এতে করে, আপনি প্রতিনিয়ত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে তা আপনার শরীরের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করবে।

এছাড়াও, মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা আরও অনেক রয়েছে। খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার বাণী রয়েছে এবং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। এমন কিছু হাদিস নিচে উল্লেখ করে দিলাম।

মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কিত হাদিস

আরেক হাদিসে সাদ (রা.) বর্ণনা করেন— একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তার হাত আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি তার শীতলতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। কেননা সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়। (আবু দাউদ: ৩৮৩৫)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘সকালে সবার আগে (খালি পেটে) (মদিনার) উঁচু ভূমির আজওয়া খেজুর খেলে তা (সর্বপ্রকার) জাদু অথবা বিষক্রিয়ার আরোগ্য হিসেবে কাজ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৫৯২) এখানে উঁচু ভূমি বলতে বোঝানো হয়েছে মদিনার পূর্ব দিকের কয়েক মাইল দূরের কয়েকটি গ্রাম।

আমাদের দেশে মরিয়ম খেজুরের চাষ হয় না। কিন্তু, আপনি যদি খেজুরের দোকানে খোঁজ করেন, তবে মরিয়ম খেজুর পেয়ে যাবেন। আজওয়া খেজুর মূলত সৌদি আরব তথা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশি হতে দেখা যায়। খেজুরের উপকারিতা সমন্ধে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক উপকারিতা বর্ণনা করা আছে এবং মরিয়ম খেজুর ও সাধারণ খেজুর সম্পর্কেও পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বলা আছে।

আলি (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল: ২৮৪৭২; অনেকে বর্ণনাটি দুর্বল বলেছেন)

আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (স.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি; রোজা অধ্যায়: ৬৩২)

উপরোক্ত হাদিসগুলো পড়লে বুঝা যায় খেজুর খাওয়া আমাদের দেহের জন্য কত উপকারী। স্বয়ং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে খেজুর খেতেন এবং আমাদেরকে খেজুর খাওয়ার জন্য বলেছেন। খেজুরের জাতের মাঝে মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা এবং আজওয়া খেজুরের উপকারিতা সবথেকে বেশি। তাই, সাধ্যের মাঝে থাকলে অবশ্যই এই দুই জাতের খেজুর কিনে খাওয়ার চেস্টা করবেন।

শেষ কথা

ফেরদাউস একাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। খেজুর খেলে উপরোক্ত সকল উপকারিতা পাবেন। তাই, প্রতিদিন অন্তত ৩টি খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে আপনার শরীর থাকবে সর্বদা কর্মঠ এবং সবল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment