নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আজকের এই ব্লগ পোস্টে। নিম পাতা তেঁতো হলেও উপকারী বলতে একটা প্রবাদ রয়েছে। আসলে, নিম পাতা খেতে অনেক তেঁতো, কিন্তু এই পাতার রসের অনেক গুণ রয়েছে। এছাড়াও, নিম পাতা শুধু খেয়েই নয়, নিম পাতা দিয়ে অনেক ঔষধ তৈরি হয় যা বিষ-ব্যাথার জন্য এক মহৌষধ।

নিম পাতার উপকারিতা এবং নিম পাতার অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। তাই, আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে নিম পাতা দিয়ে সকল তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করবো। তো চলুন, শুরু করা যাক।

নিম পাতার উপকারিতা
নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতা কী?

নিম গাছ থেকে যে পাতা পাওয়া যায়, সেটাই নিম পাতা। আমাদের দেশে ২ ধরণের নিম গাছ দেখা যায়। একটি সাধারণ নিম গাছ এবং অপরটি জাত নিম গাছ। এই গাছগুলোর নাম এলাকা ভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে, নাম ভিন্ন হলেও উভয় নিম গাছের এবং নিম পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিম গাছ একটি ঔষধি গাছ হিসেবেই বহুল প্রচলিত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে।

নিম ছত্রাকনাশক হিসেবে, ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসেবে, ভাইরাসরোধক হিসেবে, কীট-পতঙ্গ বিনাশে, চ্যাগাস রোধ নিয়ন্ত্রণে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে, দন্ত চিকিৎসায় ব্যথামুক্তি ও জ্বর কমাতে, জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে, নিম পাতার রস ব্যবহার করে অনেক রোগের ঔষধ তৈরি করা হয়ে থাকে। এছাড়াও, নিম পাতা ব্যবহার করে রূপ চর্চা করে থাকেন অনেকে। শরীরের কোনো অংশে ব্যাথা পেলে নিম পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে ব্যাথা পাওয়া অংশে মালিশ করলে ব্যাথা অতি দ্রুত উপশম হয়।

নিম গাছের ডাল দিয়ে অনেকেই দাঁত মাজেন। দাতে থাকা সকল ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু নিধন করা সম্ভব নিম গাছের ডাল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করে। নিম গাছের এতই উপকারিতা যে, নিম গাছ নিয়ে একটি কবিতা লিখেছেন বনফুল। তো চলুন, নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিম পাতা একটি ঔষধি গাছ যা বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। নিম পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিভাইরাল, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে ঠান্ডা, সর্দি, এবং ফ্লু প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিম পাতার রস ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিম পাতার রস খালি পেটে পান করলে এটি জীবাণুনাশক এবং কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। এটি শরীর থেকে টক্সিন এবং বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন – কালো জিরার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

পেটে কৃমি থাকলে খাওয়ার প্রতি অনিহা চলে আসে। নিম পাতার রস খেলে পেটের কৃমিনাশক হিসেবে নিম পাতা কাজ করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।

শুধু শরীরের উপকার নয়, নিম পাতা দিয়ে রূপচর্চা করা সম্ভব। তো চলুন, নিম পাতা দিয়ে রূপচর্চা করার পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

নিম পাতা দিয়ে রূপচর্চা

ত্বকের যত্নে নিম পাতা একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। নিম পাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদান ত্বকের জন্য উপকারী। নিম পাতা প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু, এখন আধুনিকতার ছোয়া পেয়ে আমরা ভুলেই গেছি যে নিম পাতা দিয়ে রূপচর্চা এবং ত্বকের যত্ন নেয়া সম্ভব। নিম পাতা দিয়ে ত্বকের যত্ন কীভাবে নেয়া যায় তা নিম্নে বর্ণিত –

  • ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে: নিম পাতায় থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানগুলি ব্রণের কারণ ব্যাকটেরিয়া এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • দাগ দূর করতে সাহায্য করে: নিম পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে: নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানগুলি ত্বকের কোষগুলিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে: নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানগুলি ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে: নিম পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

নিমের পাতা খেলে আমাদের শরীরের আজেবাজে জিনিস ভালো হয়ে যায় মানে শরীরের পরিপাক তন্ত্রের গতি বাড়ে সেই সাথে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে দেয় এবং রক্তের শুদ্ধতা বাড়ায়। ফলাফল হিসেবে শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে আপনার ত্বক পরিষ্কার থাকবে। এ জন্য নিমের পাতা ৩/৪ টি প্রতিদিন চিবিয়ে খেতে হবে।

আরও পড়ুন – মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত

উফফ!! মুখটি কি এখনি তেতো হয়ে গেলো?? আরে সহজ সমাধান দেই!  নিমপাতা বেটে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করে রোদে শুকাতে দিন। ভালো ভাবে শুকিয়ে গেলে কাঁচের বয়ামে সংরক্ষণ করুন। প্রতিদিন সকালে ২/৩ টি বড়ি পানি দিয়ে পেটে চালান করে দিন!

নিমপাতা তেঁতো হলেও নিম পাতার উপকারিতার শেষ নেই। আপনি চাইলে নিম পাতা দিয়ে চা করে খেতে পারেন। নিম পাতা দিয়ে চা করার জন্য শুকনো নিম পাতা গুঁড়ো অথবা তাজা নিমের ৬/৭ টি পাতা গরম পানিতে ছেড়ে ২/৩ মিনিট জ্বাল দিয়ে মধু মিশিয়েই বানিয়ে ফেলা যায় সুমিষ্ট নিম চা , তবে যারা নতুন নিম পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খাবেন তাদের জন্য সময়সীমা ১ মিনিট। যত বেশি জ্বাল দিবেন তত তিতা হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা হজমের সমস্যা থাকলে সেরে যাবে কয়েক দিনের মাঝেই।

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

নিম পাতা একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছ, যার পাতা, ছাল, ফুল, ফল, এবং বীজ সবই চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। নিম পাতার মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপাদান শরীরের জন্য উপকারী, তবে কিছু ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।

নিম পাতার ক্ষতিকর দিকগুলি হল:

  • অ্যালার্জি: নিম পাতায় থাকা কিছু উপাদান কিছু অনেকের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলি হল চুলকানি, লালভাব, ফোলা, এবং শ্বাসকষ্ট। আপনার যদি পূর্বে থেকে অ্যালার্জি থাকে, তবে নিম পাতা সেবন করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
  • বমি বমি ভাব, বমি, এবং পেট ব্যথা: নিম পাতা খাওয়ার ফলে কিছু লোকের ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, বমি, এবং পেট ব্যথা হতে পারে।
  • গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ: গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদানের সময় নিম পাতা সেবনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ এটি ভ্রূণ বা শিশুর ক্ষতি করতে পারে।
  • অন্যান্য ওষুধের সাথে ইন্টারঅ্যাকশন: নিম পাতা অন্যান্য ওষুধের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারে। তাই নিম পাতা সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

নিম পাতার উপকারিতা রয়েছে, কিন্তু নিম পাতার অপকারিতাগুলো মাথায় রেখেই আমাদের নিম পাতা খেতে হবে। উপকারিতার তুলনায় অপকারিতা অতি নগণ্য। তাই, উপরোক্ত সমস্যা গুলো না থাকলে অবশ্যই নিমপাতা রস করে কিংবা শুকিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে নিম পাতার উপকারিতা এবং নিম পাতার অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনি যদি সর্বদা সুস্থ থাকতে চান, তবে অবশ্যই প্রতিনিয়ত নিম পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে এবং বিভিন্ন জীবাণু থেকে শরীর থাকবে সর্বদা শক্তিশালী।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment