নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি? নামাজের ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয়

নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি না জানলে নামাজ আদায় করার সময় যদি কোনো ওয়াজিব ছুটে যায়, তবে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হয়। সিজদায়ে সাহু আদায় না করেই নামাজ আদায় সম্পন্ন করলে উক্ত নামাজ আবারও আদায় করতে হয়। নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি এবং নামাজের ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয় সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো, নামাজের ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয় কী? এছাড়াও, নামাজের ওয়াজিব সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো চলুন, শুরু করা যাক।

নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি
নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি

নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি?

নামাজের ওয়াজিব ১৪ টি। এই ১৪ টি ওয়াজিবের একটিও যদি নামাজ আদায়কালীন সময়ে ছুটে যায়, তবে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হয়। সিজদায়ে সাহু আদায় করতে ভুলে গেলে নতুন করে নামাজ আদায় করতে হয়। অনেকেই নামাজের ওয়াজিবগুলো কী কী জানেন না। তো চলুন, নামাজের ওয়াজিব কি কি জেনে নেয়া যাক।

নামাজের ওয়াজিবগুলো হচ্ছে –

  1. প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়া।
  2. প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর সুরা মিলানো (কমপক্ষে তিন আয়াত বা তিন আয়াতের সমান এক আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করা)।
  3. ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে কিরাত পাঠ করা। চার রাকাতের নামাজের ক্ষেত্রে, তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য সূরা না মিলালেও হবে।
  4. কিরাআত, রুকু, সিজদার মধ্যে ক্রমধারা বা তারতিব ঠিক রাখা।
  5.  রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
  6. দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে সোজা হয়ে বসা।
  7. রুকু, সিজদা, রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে কমপক্ষে এক তাসবিহ পরিমাণ স্থির থাকা। যাতে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যথাস্থানে পৌঁছে যায়।
  8. তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে দুই রাকাত পর তাশাহুদ পড়া বা সম-পরিমাণ সময় বসা।
  9. প্রথম ও শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া।
  10. জাহেরি নামাজে প্রথম দুই রাকাআত ইমামের জন্য উচ্চস্বরে কিরাআত পড়া এবং সিররি নামাজের মধ্যে ইমাম ও একাকি নামাজির অনুচ্চ শব্দে কিরাআত পড়া।
  11. সালাম ফিরানো। অর্থাৎ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।
  12. বিতরের নামাজের দোয়ায়ে কুনুত পড়ার জন্য অতিরিক্ত তাকবির বলা এবং দোয়ায়ে কুনুত পড়া।
  13. দুই ঈদের নামাজে ছয় ছয় তাকবির বলা।
  14. প্রত্যেক রাকাতের ফরজ এবং ওয়াজিবগুলোর তারতিব (ধারাবাহিকতা) ঠিক রাখা।

উপরোক্ত এই ১৪টি ওয়াজিব নামাজ আদায় করার সময় অবশ্যই মানতে হবে। ভুলবশত যদি কোনো ওয়াজিব ছুটে যায়, তবে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে। সিজদায়ে সাহু আদায় করতে ভুলে গেলে নতুন করে নামাজ আদায় করতে হবে। সিজদায়ে সাহু আদায় করার নিয়ম বা নামাজের ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয় সম্পর্কে নিচে আরও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। নিচে থেকে পড়ে নিতে পারেন।

নামাজের ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয়

নামাজ আদায়কালিন যদি কোনো ওয়াজিব ছুটে যায়, তবে সাহু সিজদা দিতে হবে। সাহু সিজদা না দিলে নামাজ হবে না এবং সাহু সিজদা দেয়া না হলে নতুন করে আবারও নামাজ আদায় করতে হবে। সাহু সিজদা করার নিয়ম হচ্ছে –

শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ শরিফ, দোয়া মাসুরা পড়ার পর তাকবির দিয়ে পর পর দুইবার সিজদা করতে হবে। এরপর সালাম ফিরিয়ে নামাজ আদায় সম্পন্ন করতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত সালাত অধ্যায় সাহো অনুচ্ছেদ, ১১৮ নাম্বার হাদিস।) অথবা আমরা এভাবে বলতে পারি যে, নামাজে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে সালাম ফিরানোর আগে বা পরে তাকবির দিয়ে দুইবার সিজদা করতে হবে এবং নামাজ আদায় সম্পন্ন করতে হবে। (সহীহ মুসলিম, নাওয়াতুল আওতার ৩/৪১১।)

অর্থাৎ, আপনি সালাম ফিরানোর আগে কিংবা পরে দুই পদ্ধতিতেই সাহু সিজদা করতে পারবেন। তবে, সাহু সিজদা করতেই হবে। নয়তো, আপনার নামাজ কবুল হবে না। তো চলুন, সাহু সিজদা দেয়ার নিয়ম নিয়ে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

সিজদা সাহু দেওয়া ওয়াজিব হয় এমন কোন ভুল করলে বা ওয়াজিব ছুটে গেলে, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ শরিফ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে ডানে এবং বামে দুই দিকে সালাম ফেরাবেন। এরপর আল্লাহু আকবার বলে দুইটি সিজদায়ে সাহু দেবেন। দুই সিজদার মাঝখানে বা পরে দুয়া করতে পারবেন। ২টা অতিরিক্ত সিজদা দিয়ে আর কিছু পড়তে হবেনা, আবারও ডানে ও বামে দুইদিকেই সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবেন।

সাহু সিজদা দিতে হয় মূলত তিনটি কারণে। এগুলো হচ্ছে –

  • রুকু বা সিজদা বেশি দেয়া।
  • কোনো রুকন বা ওয়াজিব ছুটে গেলে।
  • নামাজ আদায়ে ভুল হয়েছে এমন সন্দেহ হলে।

রুকু বা সিজদা বেশি দেয়া

দুইবারের জায়গায় তিনবার রুকু করা বা দুইবার সিজদা না করে তিনবার সিজদা করা কিংবা, ৪ রাকাত নামাজে পাঁচ রাকাত আদায় করা হয়, তবে সাহু সিজদা করতে হবে। নামাজ আদায় করার সময় মনে পড়লে শেষ বৈঠকে সাহু সিজদা দিয়ে নামাজ আদায় সম্পন্ন করতে হবে।

নামাযে রুকন বা ওয়াজিব ছুটে যাওয়া

যদি ভুলক্রমে ওয়াজিব পরিত্যাগ হয় আর উক্ত স্থান ছেড়ে যাওয়ার আগেই যদি স্মরণ হয়ে যায় তবে তা আদায় করবে এতে কোন দোষ নেই- সাহু সিজদা দিতে হবে না। কিন্তু যদি উক্ত ওয়াজিব ছেড়ে পরবর্তী রুকন শুরু করার আগেই স্মরণ হয়ে যায় তবে ফিরে গিয়ে সেই ওয়াজিব আদায় করবে এবং শেষে সাহু সিজদা করবে। কিন্তু পরবর্তী রুকন শুরু করার পর যদি স্মরণ হয় তবে উক্ত ছুটে যাওয়া ওয়াজিব রহিত হয়ে যাবে। অবশিষ্ট নামায আদায় করে সালামের পূর্বে সাহু সিজদা করলেই নামায পূর্ণ হয়ে যাবে।

যেমন কেউ দ্বিতীয় রাকাতের দ্বিতীয় সিজদা থেকে উঠে না বসে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াতে যাচ্ছে। এমন সময় স্মরণ হল নিজ ভুলের কথা। তখন সে বসে পড়বে এবং তাশাহুদ পড়ে সালাত পূর্ণ করবে। কোন সাহু সিজদা লাগবে না। আর যদি কিছুটা দাঁড়ায় কিন্তু পরিপূর্ণরূপে দাঁড়ায়নি তবে সে বসে যাবে এবং তাশাহুদ পড়বে ও সালাত শেষে সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে। কিন্তু যদি পূর্ণরূপে দাঁড়িয়ে পড়ে তবে আর বসবে না। তাশাহুদ রহিত হয়ে যাবে। ঐভাবেই নামায পূর্ণ করবে এবং সালাম ফিরানোর পূর্বে সাহু সিজদা করবে।

ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে এবং সুন্নত বা নফল নামাজের প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য সূরা পড়া ওয়াজিব। কোনো কারণে যদি সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য সূরা পড়তে ভুলে যান তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে।

নামাজে ভুল হয়েছে এমন সন্দেহ হলে

নামাজে ভুল হয়েছে এমন সন্দেহ হলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। নামাজ আদায় করার সময় ২ রাকাত বা ৩ রাকাত আদায় করছি এমন সন্দেহ হলে নামাজ শেষে সালাম ফিরানোর আগে বা পরে সাহু সিজদা করে নিতে হবে।

আমাদের শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি এবং নামাজের ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয় কি এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। সহিহ ভাবে নামাজ আদায় করুন এই আশা করি। এমন আরও ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়ে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের ইসলাম ও জীবন ক্যাটাগরি ভিজিট করুন। আল্লাহ্‌ হাফেয।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment