ঘরোয়া পদ্ধতিতে থাইরয়েড কমানোর উপায় জেনে নিন

থাইরয়েড কমানোর জন্য অনেকেই চিকিৎসকের দারস্থ হন। কিন্তু, ঘরোয়া কিছু থাইরয়েড কমানোর উপায় রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানি না। ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে থাইরয়েড কী, থাইরয়েড কেন হয় এবং ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে থাইরয়েড কমানোর যায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

থাইরয়েড গ্রন্থি হল একটি ছোট, পিঁয়াজ আকৃতির অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি যা আমাদের ঘাড়ের সামনে অবস্থিত। এটি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি হরমোন, থাইরক্সিন (T4) এবং ট্রাইওডোথাইরোনিন (T3) তৈরি করে। এই হরমোনগুলি আমাদের বিপাক, বৃদ্ধি এবং বিকাশ, মানসিক অবস্থা এবং মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েড গ্রন্থি যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে এটি থাইরয়েড সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। যাকে আমরা থাইরয়েড বলেই জানি। তো চলুন, থাইরয়েড বেড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া এবং থাইরয়েড কমানোর উপায় জেনে নেয়া যাক।

থাইরয়েড কমানোর উপায়
থাইরয়েড কমানোর উপায়

থাইরয়েড কেন হয়

থাইরয়েড গ্রন্থি আমাদের গলায় থাকে। থাইরয়েড মূলত দুই ধরণের হরমন উৎপাদন করে থাকে। এগুলো হচ্ছে – থাইরক্সিন এবং ট্রাইওডোথাইরোনিন। কিন্তু, যখন এই হরমোনগুলো উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন থাইরয়েড সমস্যা দেখা যায়। মূলত দুই ধরণের থাইরয়েড সমস্যা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে –

  • হাইপারথাইরয়েডিজম
  • হাইপোথাইরয়েডিজম

থাইরয়েড গ্রন্থিতে হরমোন উৎপাদন বৃদ্ধি হয়ে গেলে উপরোক্ত এই দুইটি থাইরয়েড এর সমস্যা দেখা যায়। অনেক ডাক্তারের মতে থাইরয়েড আমাদের গলায় থাকে এবং এটি প্রজাপতির মতো। থাইরয়েড যেহেতু আমাদের শরীরের একটি গ্রন্থি, তাহলে এটির সমস্যা হওয়ার পরেও আমরা এই অবস্থাকে থাইরয়েড বলি কেন? এর উত্তর পেয়ে যাবেন নিচে।

থাইরয়েড গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত হরমোন থাইরক্সিন (T4) এবং ট্রাইওডোথাইরোনিন (T3) যা আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

থাইরয়েড কমানোর উপায়

থাইরয়েড এর সমস্যা হওয়ার পূর্বেই থাইরয়েড কমানোর উপায় অবলম্বন করে আমরা অনেক সহজেই থাইরয়েড এর সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারি। এজন্য ডাক্তারের কাছেও যেতে হবে না। কারণ, ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়া যায় চিরতরের জন্য। তো চলুন, থাইরয়েড কমানোর উপায়গুলো কী কী জেনে নেয়া যাক।

আরও পড়ুন – হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নিন

থাইরয়েড কমানোর জন্য মূলত আমাদের কিছু খাবার খেতে হবে। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এসব খাবার রাখলে থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রতিনিয়ত খাই, কিন্তু অনেকেই জানি না যে এসব খাবার খেলে থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তো চলুন, কী কী খাবার খেলে থাইরয়েড প্রতিরোধ করা সম্ভব জেনে নেয়া যাক।

  • ডাঁটা
  • আদা
  • জিরে
  • ধনে

উপরোক্ত খাবারগুলো খেলে থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শুধু নিলাম আর খেয়ে ফেললাম, এভাবে করে কিন্তু থাইরয়েড এর প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে উপরোক্ত খাবারগুলো খেতে হবে। তো চলুন, কীভাবে খেলে থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব জেনে নেয়া যাক।

ডাঁটা

ডাঁটাতে বেশিরভাগ প্রধান পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা থাইরয়েডের ভালো কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। সেলেনিয়ামের অভাবে থাইরয়েড রোগ হতে পারে এবং ডাঁটাতে সেলেনিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই, থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিংবা থাইরয়েড এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ডাঁটা খান।

আদা

থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতির মাঝে আদা খাওয়া সবথেকে সহজ একটি পদ্ধতি। কারণ, আদা অনেক সহজেই পাওয়া যায়। আদাতে রয়েছে পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ, যা থাইরয়েড এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গরে তুলতে সক্ষম। প্রতিদিন আদা বা আদা চা খেলে থাইরয়েড হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে আসে।

জিরে

জিরে শুধু মসলা হিসেবে খাওয়া হয় না। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি জিরে আমাদের শরীরের থাইরয়েড এর সমস্যা প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করতে সক্ষম। জিরে চিবিয়ে খেলে থাইরয়েড এর মতো অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন – হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণসমূহ জেনে সতর্ক হয়ে যান আজ থেকে

ধনে

ধনেতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন রয়েছে যা থাইরয়েড এর হরমোন উৎপাদন নিয়ন্ত্রন করতে এবং থাইরয়েড এর সমস্যা দূর করতে সক্ষম। বহুবছর আগে থেকেই ধনে দিয়ে বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। থাইরয়েড হলে ধনে ভিজানো পানি খেতে হবে।

থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

থাইরয়েড কমানোর উপায় সম্পর্কে তো ইতোমধ্যে জেনে গেছেন। থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায় ছাড়াও, আমরা আমাদের জীবনযাত্রা ঠিক রাখার মাধ্যমেও থাইরয়েড থেকে মুক্তি পেতে পারি। এমনই কিছু থাইরয়েড কমানোর উপায় সম্পর্কে নিচে আরও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তো চলুন, জেনে নেয়া যাক।

  1. জাঙ্ক ফুড এ চর্বি, লবণ, কার্বনেটসহ ক্ষতিকারক উপাদান বেশি থাকে। তাই, জাঙ্ক ফুড পরিহার করতে হবে। এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং নিয়মিত এগুলো খাওয়ার ফলে শরীরে অনেক খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে থাইরয়েড এর সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
  2. ভিটামিন ডি এর কমতি থাকলেও থাইরয়েড সমস্যা দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড কমানোর উপায় হচ্ছে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ১৫ মিনিট রোদে থাকা। কারণ, সূর্যের আলোতে রয়েছে ভিটামিন ডি। যা আমাদের দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, স্যালমন, ম্যাকারেল, দুগ্ধজাতীয় দ্রব্য, কমলালেবুর রস, ডিমের কুসুম ইত্যাদি খাবার খেয়ে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবু যদি আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর কমতি পড়ে যায়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে।
  3. আয়োডিন এবং খনিজসমৃদ্ধ খাবার থাইরয়েডের সমস্যার জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই যেসব খাবারে আয়োডিন এবং খনিজ উপাদানগুলো বেশি পরিমাণে থাকে যেমন – দুধ, পনির, দই এই ধরনের দুগ্ধজাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে। আয়োডিন সাপ্লিমেন্টও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে থাইরয়েড সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।
  4. থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন উৎপাদনের ভারসাম্যতা না থাকলে থাইরয়েড সমস্যা দেখা দেয়। তাই, হরমোন উৎপাদনে ভারসাম্য বজায় রাখতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া যেতে পারে। এতে বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি হয়। এ ছাড়া এটি শরীরের ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বের করে পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে।

থাইরয়েড সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উপরোক্ত থাইরয়েড কমানোর উপায়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। থাইরয়েড সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কিংবা থাইরয়েড হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করার চেষ্টা করুন।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে থাইরয়েড সমস্যা কেন হয়, থাইরয়েড কমানোর উপায় এবং থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। এমন আরও বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক কন্টেন্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। আল্লাহ্‌ হাফেয।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment