তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ও নামাজের নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত তা অনেকেই জানেন না। আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন, যারা জীবনে একবারও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করেননি। কিন্তু, তাহাজ্জুদের নামাজ অনেকেই আদায় করতে চান। আমাদের সকলের উচিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। তাই, আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো, তাহজ্জুদ নামাজ কত রাকাত এবং তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ত সম্পর্কে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত কীভাবে করতে হয় অনেকেই জানেন না। তাই, এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবি এবং বাংলা সম্পর্কে জানতে পারবেন। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত তা অনেকেই জানেন না। তাহাজ্জুদ নামাজ ২ রাকাত করে ৮ রাকাত অব্দি আদায় করা উত্তম। তবে, আপনি চাইলে যত ইচ্ছে তত রাকাত অব্দি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারেন। তাহাজ্জুদ নামাজ ৮ রাকাত পড়তে হবে, বা ১০ রাকাত পড়তে হবে এমন কোনো বাধা-বাধ্যকতা নেই। তাই, আপনি চাইলে ২ রাকাত থেকে শুরু করে ইচ্ছেমতো তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে পারেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। তবে দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত থেকে শুরু করে যত রাকাত ইচ্ছা আদায় করা যায়। ইসলামবেত্তাদের পরামর্শ হলো- ন্যুনতম চার রাকাত আদায় করা। যে কয় রাকাতই পড়া হোক, তা নিয়মিত আদায়ের অভ্যাস করা।

অর্থাৎ, আপনি যদি ৪ রাকাত করে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার অভ্যাস করেন, তবে প্রতি রাতেই ৪ রাকাত করে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করবেন। আজ ১২ রাকাত আদায় করবেন, আগামীকাল ৪ রাকাত আদায় করবেন এবং এর পরের দিন আদায় করবেন না। এমন করার থেকে প্রতিদিন ৪ রাকাত করে আদায় করা সবথেকে উত্তম। তবে, আমাদের উচিত প্রতি রাতে ৮ রাকাত করে নামাজ আদায় করা। প্রতি ২ রাকাত করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার পর বিতরের নামাজ আদায় করতে হবে। এরপর, ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেলে ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে।

অনেকের কাছে মনে হতে পারে যে, ২ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করলে তা তাহাজ্জুদ বলে গন্য হবে না। তবে, আমরা ২ রাকাত থেকে শুরু করে যেকোনো পরিমাণ রাকাত নামাজ আদায় করতে পারি। তাহাজ্জুদের নামাজ আপনার সময় এবং ইচ্ছেমতো আদায় করতে পারেন।

আরও পড়ুন – তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদের নামাজ ২ রাকাত আদায় করার নিয়ত করে ২ রাকাত আদায় করতে পারেন। কিংবা, ৪ রাকাত আদায় করার নিয়ত করে ৪ রাকাত আদায় করতে পারেন। অর্থাৎ, তাহাজ্জুদের নামাজ ২ রাকাত করেই আদায় করতে হবে এমন না। আপনি চাইলে ৪ রাকাত আদায় করার নিয়ত করে আদায় করতে পারবেন।

আশা করছি, তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত তা বুঝতে পেরেছেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব

তাহাজ্জুদের মর্যাদা অপরিসীম। ফরজ নামাজের পরে উত্তম নামাজ হলো- তাহাজ্জুদের নামাজ। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর উত্তম রোজা হলো- মহররম মাসের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর উত্তম নামাজ হলো- রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদের নামাজ)।নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় মুমিন বান্দাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

মহান আল্লাহ রাতের নামাজের গুরুত্ব কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-

اِنَّ نَاشِئَۃَ الَّیۡلِ هِیَ اَشَدُّ وَطۡاً وَّ اَقۡوَمُ قِیۡلًا

‘নিশ্চয়ই রাতের বেলার জেগে ওঠা আত্মসংযমের জন্য বেশি কার্যকর এবং স্পষ্ট কথা বলার জন্য বেশি উপযোগী।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল : আয়াত ৬)

وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا –  وَ الَّذِیۡنَ یَبِیۡتُوۡنَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا

‘আর রাহমান-এর বান্দা তারাই, যারা জমিনে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেল ব্যক্তিরা তাদেরকে (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, সালাম; আর তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের রব-এর উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে এবং দাঁড়িয়ে থেকে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৩-৬৪)

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য রাতের শেষ তৃতীয়াংশ উত্তম সময়। তাহাজ্জুদ নামাজ রাত ২ ঘটিকা থেকে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে অব্দি পড়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার পর বিতরের নামাজ আদায় করতে হয়। যদি তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য ঘুম না ভাঙ্গার সম্ভাবনা থাকে, তবে এশার নামাজ আদায় করার পর তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে নিতে হবে। এরপর, বিতরের ৩ রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে হবে।

কিন্তু তাহাজ্জুদের নামাজ মধ্যরাতে আদায় করা উত্তম। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মধ্যরাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার আগে অবশ্যই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে হবে। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে করতে পারেন। যদি আরবিতে নিয়ত করতে না চান, তবে বাংলায় নিয়ত করেও তাহজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারেন। নিচে আপনাদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত এবং বাংলা নিয়ত উল্লেখ করে দিয়েছি।

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُ اَكْبَر

অর্থ : দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি.. অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ পড়া।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য প্রথমেই তাহাজ্জুদের নিয়ত করতে হবে। এরপর, তাকবিরে তাহরিমা পরে নামাজ শুরু করতে হবে। অতঃপর, সানা পড়তে হবে। অতঃপর, সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং অন্য সূরা মিলাতে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে গিয়ে বিজোড় বার রুকুর তসবিহ ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়তে হবে বিজোড় বার (৩/৫/৭/৯ বার পড়া যাবে)। অতঃপর, ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা’ বলে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং “রাব্বানা লা’কাল হামদ” পড়তে হবে। আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে।

সিজদায় গিয়ে ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়তে হবে বিজোড় বার(৩/৫/৭/৯ বার পড়তে পারেন।)। উঠে বসে আবারও সিজদা করতে হবে একই ভাবে। দুইবার সিজদা করার পর শেষ বৈঠকে বসে তাশাহুদ, দরুদ শরিফ এবং দোয়া মাছুরা পড়তে হবে। অতঃপর, সালাম ফিরিয়ে নামাজ আদায় সম্পন্ন করতে হবে।

এভাবে করে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার নিয়ত করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন। কিংবা, আপনি চাইলে ৪ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করে ৪ রাকাত করে তাহাজ্জুদের নামাজ যত রাকাত ইচ্ছে আদায় করতে পারেন। উপরে ইতোমধ্যে আমি আলোচনা করেছি, আপনি কত রাকাত থেকে কত রাকাত অব্দি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারবেন।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস একাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত এবং তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার নিয়ত নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। এমন আরও ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়ে জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আল্লাহ্‌ হাফেয।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment