এশার নামাজ ১৫ রাকাত কি কি । eshar namaz koto rakat ki ki

এশার নামাজ ১৫ রাকাত কি কি

এশার নামাজ ১৫ রাকাত কি কি-নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা দিনে পাঁচবার করতে হবে। তন্মধ্যে রাতের নামাজ হিসেবে এশার নামাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অনেকেই জানতে চান, “ইশার নামাযের ১৫ রাকাত কী কী?” প্রকৃতপক্ষে, ইশার নামাজ ফরজ, সুন্নত, বিতর এবং নফল নামাজ সহ মোট ১৫ রাকাত নিয়ে গঠিত। এই ব্লগে আমরা সহজভাবে ইশার ১৫ রাকাত নামাজ পড়ার বিস্তারিত বিন্যাস, ফজিলত এবং সঠিক নিয়ম বর্ণনা করব।

এশার নামাজ ১৫ রাকাত কি কি?

অনেকে ইশার নামাযকে শুধু ফরজ নামায হিসেবেই জানেন, কিন্তু এর সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত, বিতর ও নফল নামাজ রয়েছে, যেগুলো একসাথে মোট ১৫ রাকাত হিসেবে আদায় করা হয়। আসুন দেখি এশার নামাজ  ১৫ রাকাত কিভাবে প্রতিটি অংশ সাজানো হয়েছে:

1. ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ (পূর্বে)

এই ৪ রাকাত নামাজ ফরজ নামাজের আগে আদায় করা হয়। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এটি নিয়মিত পালন করেছেন এবং এটি পালন করা একটি অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। তাই একে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলা হয়। নিয়মিত এই নামাজ না পড়লে গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

2. ৪ রাকাত ফরজ

এটি এশার প্রধান ও ফরজ অংশ। ৪ রাকাত ফরজ নামায জামাতে পড়া উত্তম এবং অধিক সওয়াবের কাজ। ইচ্ছাকৃতভাবে এই নামাজ না পড়লে বড় গুনাহ এবং কাযা আদায় করতে হবে।

3. ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ (পরে)

ফরয নামাযের পর এই দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলে গণ্য হয়। এই নামাযের মাধ্যমে কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করে যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।

4. ৩ রাকাত বিতরের নামায

বিতর শব্দের অর্থ ‘বিজোড়’। এটি ওয়াজিব নামাজ যা এশার নামাজের পর পড়তে হয়। এই নামাজে দোয়া কুনুত পাঠ করা হয় এবং এটি রাতের ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে না পড়লে তা গুনাহ হবে।

5. ২ রাকাত নফল নামায

সবশেষে কেউ ইচ্ছা করলে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়তে পারে। এটি ফরজ নয়, কিন্তু এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি সুন্দর মাধ্যম। রাতে ঘুমানোর পূর্বে এই নফল নামাজ আদায় করা অনেক বরকতময়।

সারসংক্ষেপ (Total Breakdown)

এখানে এশার নামাজের ১৫ রাকাত কিভাবে বিভক্ত, তা উল্লেখ করা হলো:

নামাজের ধরন রাকাত সংখ্যা ফরজ না নফল?
সুন্নত মোয়াক্কাদা (পূর্বে) ৪ রাকাত সুন্নত
ফরজ ৪ রাকাত ফরজ (অবশ্যই পড়তে হবে)
সুন্নত মোয়াক্কাদা (পরবর্তী) ২ রাকাত সুন্নত
বিতর নামাজ ৩ রাকাত ওয়াজিব
নফল নামাজ ২ রাকাত নফল

মোট = ৪ + ৪ + ২ + ৩ + ২ = ১৫ রাকাত

এশার নামাজের সময় কখন?

মাগরিবের সময় শেষ হলেই ইশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সুবহি সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে। তবে মধ্য রাতের আগেই এই নামাজ আদায় করা উত্তম।

এশার নামাজের ফজিলত

  • নবী করিম (সা.) বলেছেন:

    “যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতে পড়ে, সে রাতের অর্ধেক অংশ ইবাদত করল; আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজও জামাতে পড়ে, সে যেন পুরো রাত ইবাদত করল।” (মুসলিম শরীফ)

এশার নামাজ নিয়মিত পড়লে:

  • গুনাহ মাফ হয়
  • আল্লাহর রহমত লাভ হয়
  • দুশ্চিন্তা ও কষ্ট দূর হয়

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

প্রশ্ন ১: বিতর নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হয়?

উত্তর: হ্যাঁ, বিতর নামাজ ওয়াজিব। ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে দিলে গুনাহ হবে।

প্রশ্ন ২: এশার নামাজে নফল পড়া কি জরুরি?

উত্তর: না, এটি ঐচ্ছিক। তবে পড়লে আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্ন ৩: এশার ফরজ নামাজ না পড়লে কি হবে?

উত্তর: ফরজ নামাজ ছেড়ে দিলে বড় গুনাহ হয়। তাওবা করে কাজা করতে হবে।

প্রশ্ন ৪: এশার সুন্নত মোয়াক্কাদা পড়া কি বাধ্যতামূলক?

উত্তর: বাধ্যতামূলক না হলেও অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পড়া উচিত। নিয়মিত না পড়লে গুনাহের আশঙ্কা রয়েছে।

এশার নামাজ ১৫ রাকাত কি কি-শেষ কথা

ইশার নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা দিনের শেষে আত্মায় শান্তি আনে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ দেয়। যখন এই নামাজের মোট ১৫ রাকাত – ফরজ, সুন্নত, বিতর এবং নফল নামাজ আদায় করা হয়, তখন এটি একটি সম্পূর্ণ এবং পূর্ণাঙ্গ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। ফরজ রাকাতগুলো যেমন অপরিহার্য, তেমনি নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত অনুযায়ী সুন্নত ও বিতর রাকাতও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একজন মুমিন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত প্রতিদিন পূর্ণ ১৫ রাকাতসহ এশার নামাজ আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। এতে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ হবে, ইনশাআল্লাহ।

আসুন আমরা সবাই ইশার নামাজ গুরুত্ব সহকারে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি এবং আমাদের প্রিয়জনকেও উৎসাহিত করি।

আরও পড়ুন: 

এশার নামাজের শেষ সময়
এশার নামাজের নিয়ত বাংলায়

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment