আল্লাহু আকবার অর্থ কি এবং আল্লাহু আকবার কখন বলতে হয় এ বিষয় নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আল্লাহু আকবার শব্দের অর্থ এবং আল্লাহু আকবার বলার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আল্লাহু আকবার বলার মাধ্যমেই একজন মানুষ নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করতে পারে। কারণ, আল্লাহ্কে প্রভু হিসেবে মেনে নিলে আল্লাহু আকবার বলা আবশ্যক।
আল্লাহ্ মহান বা আল্লাহ্ সবথেকে বড় এটা বোঝাতে আল্লাহু আকবার বলা হয়ে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে, জিকির করতে এবং যেকোনো ইবাদত করতে আল্লাহু আকবার বলা জরুরী। মহান আল্লাহ্ তায়ালা মহান এটি প্রকাশ করার জন্য আমরা আল্লাহু আকবার বলে থাকি। তো চলুন, কেন এবং আল্লাহু আকবার কখন বলতে হয়, এই শব্দের ফজিলত কি এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

আলোচ্য সূচি:
আল্লাহু আকবার অর্থ কি
আল্লাহু আকবার হল একটি আরবি বাক্য যা বাংলায় “আল্লাহ মহান” বা “আল্লাহ সবচেয়ে বড়” অর্থে ব্যবহার করা হয়। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ যা আল্লাহ্র মহত্ত্ব প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, নামাজ আদায় করার সময় ব্যবহৃত হয়, হজ পালনের সময় ব্যবহৃত হয় এবং যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়। আল্লাহু আকবার শব্দটি ইসলামের প্রতি এবং আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি মুসলমানদেরকে আল্লাহর মহানত্ব এবং ক্ষমতা স্মরণ করিয়ে দেয়।
Also Read
আল্লাহু আকবার শব্দটি কুরআন শরিফে রয়েছে। কুরআন হলো মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ এবং এই গ্রন্থে আল্লাহ্র বাণী রয়েছে। কোরআনের অনেক আয়াতে আল্লাহু আকবার শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কালিমা – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অর্থ – “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। তাঁর ক্লান্তি বা ঘুম নেই। তিনিই সবকিছুর মালিক। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবকিছুই তার সৃষ্টি এবং তারই প্রশংসা করে। তিনি সৃষ্টি করতে সক্ষম, তিনি পুনরুজ্জীবিত করতেও সক্ষম। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বশক্তিমান।”
মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং তাদেরকে তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আল্লাহু আকবার শব্দটির গুরুত্ব অনেক। কারণ, এক আল্লাহ্কে কেউ নিজ চোখে না দেখেও, শুধু ইমান আনার কারণে আল্লাহু আকবার শব্দের জোড়ে মহান আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদত করেন, বিনা দ্বিধায় যুদ্ধে জড়িয়ে পরে, একে অন্যের উপকার করতে ঝাপিয়ে পড়েন। হজ পালনের সময় মুসলমানরা আল্লাহু আকবার শব্দটি উচ্চারণ করে। এটি তাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে তারা সকলেই আল্লাহর তৈরি এবং তারা সকলেই আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একত্র হয়েছে।
সুবহানাল্লাহ অর্থ কি? সুবহানাল্লাহ কখন বলতে হয়
আল্লাহু আকবার শব্দটি মুসলমানদেরকে আল্লাহ্র উপর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে সাহায্য করে। এটি তাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং তিনি দো-জাহানের মালিক। আল্লাহু আকবার শব্দটি মুসলমানদেরকে তাদের জীবনে শান্তি এবং সুখ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এটি তাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে আল্লাহ সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন এবং তিনি সকল পাপের শাস্তি দিবেন।
আল্লাহু আকবার শব্দের অর্থ কি
আল্লাহু আকবার (اللَّهُ أَكْبَرُ) শব্দের অর্থ হচ্ছে- হাকিকত এবং আক্ষরিক অর্থে আল্লাহ তাআলা সব কিছুর চেয়ে বড় এবং মহান। তিনি ইলম (জ্ঞান), কুদরাত (ক্ষমতা), সামি (শোনা), বাসির (দেখা) এবং কর্তৃত্বে সব কিছুর চেয়ে বড়। এমনকি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সত্ত্বাগত দিক থেকেও সবচেয়ে বড়। কিন্তু তিনি কত বড়? সাত আসমান এবং সাত জমিন পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার হাতের তালুতে কীসের মতো?
জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি? জাজাকাল্লাহ খাইরান কখন বলতে হয়
মহান আল্লাহর কাছে এসব (এতোই ছোট); যেন আমাদের কারো হাতের তালুতে একটা সরিষার দানার মতো! আল্লাহ্ তায়ালা কত বড়? এ বিষয়ে আল্লাহ্ তায়ালা নিজেই কুরআনে বলেছেন –
১. وَ مَا قَدَرُوا اللّٰهَ حَقَّ قَدۡرِهٖ وَ الۡاَرۡضُ جَمِیۡعًا قَبۡضَتُهٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ السَّمٰوٰتُ مَطۡوِیّٰتٌۢ بِیَمِیۡنِهٖ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ
‘ওরা আল্লাহর যথোচিত কদর করেনি। তেয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোয় থাকবে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে তাঁর ডান হাতে গুটানো। পবিত্র ও মহান তিনি, ওরা যাকে অংশী করে, তিনি তার উর্ধ্বে।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৬৭)
২. یَوۡمَ نَطۡوِی السَّمَآءَ کَطَیِّ السِّجِلِّ لِلۡکُتُبِ ؕ کَمَا بَدَاۡنَاۤ اَوَّلَ خَلۡقٍ نُّعِیۡدُهٗ ؕ وَعۡدًا عَلَیۡنَا ؕ اِنَّا کُنَّا فٰعِلِیۡنَ
‘সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দপ্তর; যেভাবে আমি সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। প্রতিশ্রুতি পালন আমার কর্তব্য; আমি এটা পালন করবই।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৪)
আল্লাহু আকবার অর্থ কি তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা সবকিছুর চেয়ে বড় এটাই বোঝাতেই আল্লাহু আকবার শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আল্লাহু আকবার কখন বলতে হয়
আল্লাহু আকবার কখন বলতে হয় এটা সবারই জানার কথা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার সময়, জিকির করার সময়, আল্লাহ্র মহত্ত্ব প্রকাশ করার সময়, সংক্ষেপে বললে, সর্বদাই আল্লাহু আকবার বলা হয়ে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার সময় তাকবিরে তাহরিমা বলতে আল্লাহু আকবার বলা হয়। আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করতে হয়।
সূরা পড়ার পর রুকুতে যাওয়ার আগে আল্লাহু আকবার বলতে হয়, সিজদায় যাওয়ার আগে আল্লাহু আকবার বলা হয়, সিজদা থেকে উঠার সময় আল্লাহু আকবার বলা হয়। নামাজ আদায় করার সময় অনেকবার আল্লাহু আকবার বলতে হয়। এছাড়া, জিকির করার সময় আল্লাহু আকবার বলা হয়ে থাকে। একজন মুসলিম যদি আল্লাহ্র মহত্ত্ব প্রকাশ না করে, তবে সে মুসলিম হতে পারে না। আল্লাহ্র মহত্ত্ব প্রকাশ করার জন্য অবশ্যই আল্লাহু আকবার বলতে হবে।
যুদ্ধে যাওয়ার সময়, হজ্জ পালন করার সময় আল্লাহু আকবার বলা হয়ে থাকে। সাওয়াব অর্জন করার উদ্দেশ্যে কিংবা আল্লাহ্কে খুশি করার উদ্দেশ্যে আল্লাহু আকবার বলা হয়ে থাকে। আল্লাহ্ মহান, আল্লাহ্ এক, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোনো মা’বুদ নেই, এসব কিছু বোঝাতে আল্লাহু আকবার শব্দটি বলা হয়।
আপনি যেকোনো ক্ষেত্রেই আল্লাহু আকবার শব্দটি বলতে পারবেন। আল্লাহু আকবার বলার ক্ষেত্রে আলাদা কোনো নিষেধ নেই।
আমাদের শেষ কথা
ফেরদাউস একাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আল্লাহু আকবার অর্থ কি এবং আল্লাহু আকবার কখন বলতে হয় এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকলে আল্লাহু আকবার কখন বলতে হবে জানতে পেরেছেন। এমন আরও ইসলামিক পোস্ট পড়তে ইসলাম ও জীবন ক্যাটাগরি ভিজিট করতে পারেন।