হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নিন

হার্ট ব্লক বা হার্ট অ্যাটাক রোগীর সংখ্যা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই, হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে গুগলে সার্চ করা মানুষের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে হার্টের রোগীর খাবার তালিকা নিয়ে আলোচনা করবো।

একজন হার্টের রোগীর কোন খাবার খাওয়া উচিত এবং কোন কোন খাবার খাওয়ার অনুচিত, এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তো চলুন, জেনে নেয়া যাক।

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা
হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

আজকের সময়ে হার্টের রোগের নামের সাথে অপরিচিত এমন কাউকে হয়তো পাওয়া যাবে না। প্রতিনিয়তই দ্রুততার সাথে বেড়ে চলেছে হার্টের রোগীর সংখ্যা। এছাড়াও এখন এই রোগটি বয়স্কদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। এখন অল্প বয়স্ক এমনকি নবজাতক শিশুর ও জীবনে শঙ্কা সৃষ্টি করছে। তাই আমাদের সবার এই রোগটি এড়িয়ে চলতে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার শুরুটা করতে পারেন আপনার খাদ্যাভ্যাস থেকে।

আপনার খাদ্যাভাসে সামান্য পরিবর্তন আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। যারা ইতিমধ্যে এই রোগে আক্রান্ত কিংবা যারা এখনো আক্রান্ত হননি তারাও নিজের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজের হার্টকে ভালো রাখতে পারেন, যাতে ভবিষ্যতে কখনো আক্রান্ত না হতে হয়। আপনারা হয়তো ভাবছেন এমন কি খবর যা হার্টের রোগ প্রতিরোধ করবে? চলুন জেনে নেই একজন হার্টের রোগীর খাবার তালিকায় কি কি থাকা উচিত?

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, দেশে মোট মৃত্যুর ৩৪ শতাংশের পেছনে দায়ী হৃদ্‌যন্ত্র ও রক্তনালির রোগ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা হার্টের রোগকে বলেন ‘ডেডলি ডিজিজ’। কারণ এই রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেশি। কিছু বুঝে ওঠার আগে হঠাৎ করে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।

হার্টের রোগীর খাবার তালিকায় যেসব খাবার রাখতে হবে

হার্ট রোগে আক্রান্ত হলে কিংবা হার্টের রোগকে শুরু থেকেই প্রতিরোধ করার জন্য আমরা আমাদের খাদ্যাভাসে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারি। এতে করে, এই রোগ নিয়ে আমাদেরকে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। তো চলুন, যেসব খাবার তালিকা অনুসরণ করতে হবে, তা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

১. আঁশযুক্ত খাবার

একজন হার্টের রোগীর খাবারের তালিকায় প্রথমেই প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে সেসব খাবার রাখতে হবে। এসব খাবারের কারণে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। এই ব্যাকটেরিয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন – হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণসমূহ জেনে সতর্ক হয়ে যান আজ থেকে

প্রচুর আঁশযুক্ত এরকম সবজির মধ্যে রয়েছে শিম ও মটরশুঁটি জাতীয় সবজি, কলাই ও ডাল জাতীয় শস্য এবং ফলমূল।এছাড়াও আলু এবং শেকড় জাতীয় সবজি খোসাসহ রান্না করলে সেগুলো থেকেও প্রচুর আঁশ পাওয়া যায়। আঁশযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টরল বের করে দেয়।

এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যেমন: পাইলস, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম ও ডাইভারটিকুলাইটিস রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং একজন হার্টের রোগীর খাবার তালিকায় অবশ্যই আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে।

২. ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার

আমাদেরকে সুস্থ রাখতে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ প্রচুর সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এসব খাবার হৃদরোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে। হৃদরোগের যেসব কারণ আছে সেগুলো প্রতিরোধ করতেও এসব খনিজ ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।

Read more : 5 Importance of Food Hygiene

অনেক খাদ্য বিশেষজ্ঞ মতে, স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার তালিকার মাধ্যমেই এসব ভিটামিন ও খনিজ পাওয়া সম্ভবপর। তবে তার মধ্যে ব্যতিক্রম হচ্ছে ভিটামিন ডি। কারো শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব থাকলে খাবার তালিকায় যেসব খাবার রাখা প্রয়োজন:

প্রতিদিন পাঁচটি ফল বা সবজি খাওয়া। এক গ্লাস জুস। শিম ও ডাল জাতীয় শস্যও খেতে পারেন। বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারে থাকে ভিটামিন ই। মাছ, দুগ্ধজাত খাবার ও হোলগ্রেইনে পাওয়া যায় ভিটামিন বি। কলা, আলু এবং মাছে পটাশিয়াম। হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের জন্য সর্বোত্তম খাবারগুলোর একটি মনে করা হয় মাছকে। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।

আরও পড়ুন – ব্রেন স্ট্রোক এর লক্ষণসমূহ কী কী জেনে রাখা জরুরী

এই উপাদানটি ট্রাইগ্লিসারাইড এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও ডাল ও হোলগ্রেইনে ম্যাগনেসিয়াম। দুগ্ধজাত খাবার ও সবুজ পাতার সবজি থেকে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম। তাই সকল হার্টের রোগীর খাবার তালিকায় এসব খাবার রাখতে হবে।

৩. প্রতিদিন ফলমূলজাতীয় খাবার

হার্টের রোগীর জন্য একটি সাস্থ্যকর খাবার তালিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। সাস্থ্যকর খাবার বলতে আমরা প্রথমেই বুঝি ফলমূল। কারণ ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনস থাকে। যেমন ধরুন –

  • আপেল – হার্টের রোগীর জন্য আপেল একটি উপকারী খাবার। কারণ এই ফলে রয়েছে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, থিয়ামিন, নিয়াসিন, কোলেন ইত্যাদি। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা অতিরিক্ত কোলেস্টরল কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। যা আমাদের হার্টকে সুস্থ্য রাখতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • পেয়ারা – এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি , ভিটামিন বি6 , ক্যালসিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি উপাদান। যা হার্টের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং হার্টকে সুস্থ্য রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • কলা – এই ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, বি6 ও ফাইবার রয়েছে। এতে থাকা পটাশিয়াম প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া দেখা গিয়েছে যে কলাতে যেহেতু ফাইবার রয়েছে তাই এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই এই বিষয়গুলো একজন হার্টের রোগীর জন্য মাথায় রাখা খুবই জরুরি।
  • কমলালেবু – এই ফলে রয়েছে অনেকখানি ভিটামিন সি এবং প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আমদের দেহের সকল অংশের উন্নতি সাধন করে থাকে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি আমাদের হার্টকে সমপরিমাণে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।

হার্টের রোগীর খাবার তালিকায় যেসব খাবার রাখা যাবে না

আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হল হার্ট। এই অঙ্গটি দেহের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে দেয়। যা আমাদের দেহের সহস্র কোষগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাই তো সুস্থ থাকতে হার্টের যত্ন নিন এবং সচেতন হন। হার্টকে ভালো রাখতে আমাদের কিছু খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে যেমন – ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড , বাড়িতে তৈরি অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার , অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করা হয় এমন মিষ্টি জাতীয় খাবার , অতিরিক্ত লবণ , স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি জাতীয় খাবার।

আরও পড়ুন – ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে জেনে নিন

একজন হার্টের রোগীকে অবশ্যই খাবারের তেল সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মানসম্মত খবর তেল ব্যাবহার করতে হবে। কোলেস্টরেল বা উচ্চরক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এমন খবর থেকে বিরত থাকতে হবে। বেশিরভাগ হার্ট এ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ দেহে কোলেস্টরলের বৃদ্ধি বা উচ্চরক্তচাপ সৃষ্টি হওয়া।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস অ্যাকাডেমির আজকের এই ব্লগ পোস্টে আপনাদের সাথে হার্টের রোগীর খাবার তালিকা নিয়ে আলোচনা করেছি। একজন হার্টের রোগী এবং যে ব্যক্তি আগে থেকেই হার্টের রোগ প্রতিরোধ করতে চায়, তার খাবার তালিকা যেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে বিস্তর ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন। আর এমন স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় জানতে আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত ভিজিট করতে পারেন। আল্লাহ্‌ হাফেয।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment