রসুন খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রতিনিয়ত তরকারি রান্নায় রসুন দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু, অনেকেই রসুন খাওয়ার নিয়ম এবং রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানে না। প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, আয়োডিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর রসুনকে এক কথায় সুপার ফুড বলা হয়। আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে রসুন খাওয়ার উপকারিতা সমূহ নিয়ে একদম বিস্তারিত আলোচনা করবো।

শারীরিকভাবে ফিট এবং কর্মঠ থাকতে রসুন খাওয়ার বিকল্প নেই। রসুনে আমাদের দেহের সকল প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, আয়োডিন সহ আরও অনেক উপাদান রয়েছে শুধুমাত্র রসুনের একটি দানায়। এতো সব উপাদান মাত্র একটি খাবার থেকে পাওয়া গেলে এই সুযোগ বাদ যাবে কেন? তো চলুন, রসুনের আরও কিছু উপকারী দিক নিয়ে তর্জমা করা যাক।

রসুন খাওয়ার নিয়ম
রসুন খাওয়ার নিয়ম

রসুন খাওয়ার উপকারিতা

রসুন খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে। রসুন আমাদের দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন অনেক উপাদান দিয়ে তৈরি। আমরা শুধু তরকারির সঙ্গে রসুন খাই। কিন্তু আমরা যদি শুধু রসুন খাই, তবে তা আমাদের দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। নিচে রসুন খাওয়ার উপকারিতা সমূহ উল্লেখ করে দিলাম।

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
  • কোলেস্টেরল কমানো
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো
  • রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি
  • অ্যাসিডিটির সমস্যা কমানো
  • ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উন্নতি
  • চর্মরোগের চিকিৎসা

উপরোক্ত সকল উপাদান এবং উপকারিতা পাওয়া যাবে রসুনের মাঝে। উপরোক্ত সকল উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আরও বিস্তারিত বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। চলুন, জেনে নেয়া যাক।

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: রসুন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, রসুন একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক যা শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: রসুনে উপস্থিত অ্যালিসিন রক্তনালীগুলিকে শিথিল করতে এবং রক্তপ্রবাহ দ্রুত করতে সাহায্য করে। এতে করে রক্তচাপ কমে যায়।
  • কোলেস্টেরল কমানো: রসুন কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটি LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং HDL (ভাল) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো: রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তনালীগুলিকে সুস্থ রাখতে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ: রসুনে উপস্থিত অ্যালিসিন রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ: রসুনে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করে। এটি বেশ কয়েকটি ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি: রসুন হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রিক জুসের পিএইচ দ্রুত করে এবং পাচন প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে।
  • অ্যাসিডিটির সমস্যা কমানো: রসুন অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উন্নতি: রসুন ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি সর্দি-কাশি, ফ্লু, এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • চর্মরোগের চিকিৎসা: রসুন চর্মরোগের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। এটি ব্রণ, ফাঙ্গাল সংক্রমণ, এবং অন্যান্য চর্মরোগের লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বক ভালো থাকে: প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে ত্বক ভালো থাকে, ত্বকে বার্ধ্যকের ছাপ পড়ে না, চেহারায় কোনো দাগ থাকলে কমে যায়।
  • রক্ত পরিশোধিত করে: প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে রক্তের পরিশোধনক্ষমতা বেড়ে গিয়ে রক্ত চলাচলে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসে, তাতে শরীর ভালো থাকে, নিরোগ দেহের জন্য সাবলীল রক্ত চলাচল অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়।

আরও পড়ুন – আজওয়া খেজুরের উপকারিতা সমূহ কী কী জেনে নিন

প্রাচীন ব্যাবিলন, মিসর, গ্রিস, রোম, চীন, ভারত; এই সকল বিখ্যাত প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত রসুন খেতেন। তারা রসুন খেতেন এবং সুস্থ থাকতেন। মূলত তারা সুস্থ থাকার জন্যই প্রতিনিয়ত রসুন খেতেন। বিজ্ঞানীরা রসুনকে বিশ্লেষণ করে বলছেন যে, নিঃসন্দেহে রসুন একটি হারবাল ওয়ান্ডার ড্রাগ। অর্থাৎ, রসুনে অনেক ধরণের উপকারী উপাদান রয়েছে যা আমাদের দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

সঠিকভাবে রসুন খাওয়ার নিয়ম

আমরা সাধারণত রসুন রান্নায় খেয়ে থাকি। তরকারিতে রসুন না দিলে সেটি তরকারিই যেন হয় না। তরকারিতে রসুন খেলে রসুনের সব পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় না। রসুনের সকল পুষ্টিগুণ পেতে হলে রসুন কাঁচা খেতে হবে। রসুন কাঁচা খালি পেটে খেতে হবে। এতে করে, আমাদের শরীরে রসুন অনেক দ্রুত কাজ করবে। তাছাড়া, রসুন প্রতিদিন ২ কোয়া কাঁচা খাওয়া উত্তম।

রসুন কীভাবে খেতে হয় তা নিচে নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করে দিয়েছি। পড়ে নিতে পারেন।

রসুন, পেয়াজ, মরিচ এবং লবণ একসাথে করে ভর্তা করে খেতে পারেন। এই খাবারটি অনেক সুস্বাদু হয় এবং রসুনে থাকা সকল পুষ্টিগুণ পাবেন এভাবে করে রসুন খেলে।

হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে ২ কোয়া রসুন কুচি করে সামান্য ঘিয়ে ভেজে খান। সবজির সাথেও রসুন খেতে পারেন।

আদা, মধু, এবং রসুন মেশানো চা খেলে ঠান্ডা ও জ্বরের সমস্যা কমবে। ঠান্ডার জন্য রসুনের একটি টনিক বানিয়ে খেতে পারেন। একটি মাঝারি কাচের বয়ামে ৩-৪ কোয়া রসুন থেতলে দিন। তারপর ওতে মধু ঢেলে দিন। বয়ামের মুখ এয়ার টাইট করে বেঁধে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। প্রতিদিন খালি পেটে এই মিশ্রণটি আধা চা চামচ করে ছয় বার খাবেন। জ্বর-ঠান্ডার পাশাপাশি বিভিন্ন সংক্রমণ দূর হবে। 

আরও পড়ুন – মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

প্রথমে একটি পাত্রে পেঁয়াজ-রসুন-আদা-শুকনো লঙ্কা কুচি মেশান। আলাদা পাত্রে লেবু চিপে রস তৈরি রাখুন। এবার কুচোনো উপকরণে লেবুর রস মেশান। সব শেষে ভিনিগার ঢেলে মিশিয়ে অন্তত ১ সেন্টিমিটার ফাঁক রেখে পাত্রটি ঢেকে রাখুন। সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা ও ফ্লু সারাতে নিয়মিত ব্যবহার করুন।

এভাবে করে রসুন খেলে রসুন খাওয়ার উপকারিতা সব পাবেন। রসুন খাওয়ার নিয়ম মেনে রসুন প্রতিনিয়ত খেলে এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এতে করে, যেকোনো রোগ হওয়ার পূর্বেই আপনার শরীর উক্ত রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তৈরি হয়ে যাবে। প্রতিনিয়ত রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে করে, প্রবীণ বয়সেও থাকতে পারবেন সবল এবং সুস্বাস্থ্যের মালিক।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস একাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে রসুন খাওয়ার নিয়ম এবং রসুন খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। রসুন প্রতিনিয়ত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এতে করে, রসুন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবে। স্বাস্থ্য বিষয়ক আরও বিভিন্ন তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment