বিতর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। বিতর নামাজের নিয়ম এবং বিতর নামাজের নিয়ত অনেকেই জানেন না। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিতর নামাজ আদায় করার নিয়ম এবং বিতর নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
একজন মুসলমান হিসেবে শুধু ফরজ নামাজ আদায় করা আমদের দায়িত্ব নয়, ফরজ নামাজের পাশাপাশি ওয়াজিব, সুন্নত এবং নফল নামাজও আদায় করতে হবে। বিতর নামাজ মূলত ৩ রাকাত। ইশার নামাজ আদায় করার পর বিতরের ৩ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়।
কিন্তু, অনেকেই জানেন না যে, বিতরের নামাজ কিভাবে পড়তে হবে। এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে বিতরের নামাজের নিয়ম জানতে পারবেন। তো চলুন, শুরু করা যাক।
Also Read

আলোচ্য সূচি:
বিতর নামাজের নিয়ত
আমি কিবলামুখি হয়ে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে বিতরের তিন রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবার। এটা বলতে বিতর নামাজের নিয়ত করতে হবে। তবে, আপনি চাইলে নিজের ইচ্ছে মতো বলতে পারেন। আপনি যে বিতর নামাজ আদায় করার সংকল্প বা ইচ্ছে পোষণ করে নামাজ আদায় শুরু করেছেন, সেটা প্রকাশ করতে পারলেই হবে।
নিয়ত/সংকল্প/ইচ্ছে সবকিছুর মানে একই। বিতর নামাজ আদায় করার জন্য নিজের ইচ্ছেমতো নিয়ত করলেই হবে। অনেক সময় বিভিন্ন নিয়ত দেখা যায়। অর্থাৎ, নামাজ শিক্ষা বই এবং অনেক ওয়েবসাইটে বিতর নামাজের নিয়ত দেখা যায়, এসব নিয়ত মুখস্ত করে নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক নয়। তাছাড়া, এসব নিয়ত কুরআন এবং হাদিসে কোথাও উল্লেখ করা নেই।
নামাজ আদায় করার জন্য সংকল্প করলেই নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে। এরপর, তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজ আদায় শুরু করতে হবে। বিতর নামাজের নিয়ম না জেনে থাকলে নিচে থেকে বিতর নামাজ আদায়ের নিয়ত দেখে নিতে পারেন।
বিতর নামাজের নিয়ম
এশার নামাজ আদায় সম্পন্ন হলে বিতর নামাজের নিয়ত করার পর বিতর নামাজ আদায় করতে হবে। নিয়ত করার পর আল্লাহু আকবার বলে দুই হাত নাভির উপর বাঁধতে হবে। এরপর, সানা পড়তে হবে। সানা মুখস্ত না থাকলে নিচে থেকে সানা মুখস্ত করে নিতে পারেন।
সানা
আরবি : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ،
বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাকাল্লাহুম্মা অবি হামদিকা, অতাবা-র কাসমুকা অতাআলা জাদ্দুকা অলা ইলাহা গয়রুক।
সানা পড়ার পর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। সূরা ফাতিহা পড়ার পর কুরআন থেকে অন্য যেকোনো সূরা পড়তে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে এবং রুকুতে গিয়ে বিজোড় বার সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়তে হবে। ৩ বার / ৫ বার / ৭ বার / ৯ বার যেকোনো সংখ্যক বিজোড় বার পড়তে হবে রুকুর তসবিহ। এরপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
আরও পড়ুন – জোহরের নামাজ কত রাকাত? জোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম
অতঃপর, রাব্বানা লাকাল হামদ বলতে হবে একবার। এরপর আবারও আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পড়তে হবে। ৩ বার / ৫ বার / ৭ বার / ৯ বার যেকোনো সংখ্যক বিজোড় বার পড়তে হবে সিজদার তসবিহ। এরপর সিজদা থেকে উঠে বসতে হবে এবং আবারও সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে আবারও ৩ বার / ৫ বার / ৭ বার / ৯ বার যেকোনো সংখ্যক বিজোড় বার সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পড়তে হবে।
এরপর, আবারও উঠে দাঁড়াতে হবে। দাঁড়ানোর পর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। সূরা ফাতিহা পড়ার পর কুরআন থেকে অন্য যেকোনো সূরা পড়তে হবে। এরপর, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে এবং রুকুতে গিয়ে বিজোড় বার সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়তে হবে। ৩ বার / ৫ বার / ৭ বার / ৯ বার যেকোনো সংখ্যক বিজোড় বার পড়তে হবে রুকুর তসবিহ। এরপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
অতঃপর, রাব্বানা লাকাল হামদ বলতে হবে একবার। এরপর আবারও আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পড়তে হবে। ৩ বার / ৫ বার / ৭ বার / ৯ বার যেকোনো সংখ্যক বিজোড় বার পড়তে হবে সিজদার তসবিহ। এরপর সিজদা থেকে উঠে বসতে হবে এবং আবারও সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে আবারও ৩ বার / ৫ বার / ৭ বার / ৯ বার যেকোনো সংখ্যক বিজোড় বার সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পড়তে হবে। এরপর উঠে বসতে হবে। বসে তাশাহুদ পড়তে হবে। তাশাহুদ পড়ার পর উঠে দাঁড়াতে হবে।
দাঁড়ানোর পর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। সূরা ফাতিহা পড়ার পর কুরআন থেকে অন্য যেকোনো সূরা পড়তে হবে। এক্ষেত্রে, সূরা কাওসার পড়তে পারেন বা অন্য যেকোনো সূরা। অতঃপর, হাত ছেড়ে দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে তাকবির দিয়ে আবারও হাত বাঁধতে হবে। হাত বাঁধার পর দোয়া কুনুত পড়তে হবে। দোয়া কুনুত মুখস্ত না থাকলে নিচে থেকে মুখস্ত করে নিতে পারেন।
দোয়া কুনুত আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
اللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِيْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ، اللّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّيْ وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাইনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নুমিনুবিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর; ওয়া নাশকুরুকা ওয়া লা নাকফুরুকা; ওয়া নাখলাঊ ওয়া নাতরুকু মাইঁইয়াফঝুরুকা; আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু; ওয়া লাকা নুসাল্লি ওয়া নাসঝুদু; ওয়া ইলাইকা নাসআ ওয়া নাহফিদু; নারঝু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা আজাবাকা; ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মুলহিক্ব।’
আরও পড়ুন – মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত? মাগরিবের নামাজ পড়ার নিয়ম
দোয়া কুনুত পড়া শেষ হলে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে গিয়ে বিজোড় বার সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়তে হবে। ৩ বার / ৫ বার / ৭ বার / ৯ বার যেকোনো সংখ্যক বিজোড় বার পড়তে হবে রুকুর তসবিহ। এরপর, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
অতঃপর, রাব্বানা লাকাল হামদ বলতে হবে একবার। এরপর আবারও আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পড়তে হবে। ৩ বার / ৫ বার / ৭ বার / ৯ বার যেকোনো সংখ্যক বিজোড় বার পড়তে হবে সিজদার তসবিহ। এরপর সিজদা থেকে উঠে বসতে হবে এবং আবারও সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে আবারও ৩ বার / ৫ বার / ৭ বার / ৯ বার যেকোনো সংখ্যক বিজোড় বার সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পড়তে হবে।
অতঃপর, উঠে শেষ বৈঠকে বসতে হবে। শেষ বৈঠকে বসে তাশাহুদ, দরুদ শরিফ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে। অতঃপর, ডান দিকে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরাতে হবে এবং আবারও বাম দিকে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরাতে হবে। এভাবে করে বিতরের ৩ রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে হবে।
আমাদের শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিতরের নামাজ কত রাকাত, বিতরের নামাজের নিয়ত এবং বেতের নামাজের নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি, এই পোস্টটি আপনাকে বিতর নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে সহযোগিতা করবে। এমন আরও পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আল্লাহ্ হাফেয।