নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি? নামাজের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কয়টি

নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি এই বিষয় নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। নামাজ আদায় কালীন সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব কাজ করেছেন, অর্থাৎ ফরজ বা ওয়াজিব নয় এমন কাজগুলোকে নামাজের সুন্নত বলা হয়। নামাজ আদায় করার সময় আমাদের সকলের উচিত ফরজ এবং ওয়াজিব পালনের পাশাপাশি সুন্নতসমূহ আদায় করা। এতে করে, আমরা ফরজ ইবাদত করার পাশাপাশি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত পালন করতে পারবো।

একজন প্রকৃত মুসলিম ও মুমিন হতে হলে আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে হবে কুরআন মেনে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস অনুযায়ী। শুধু আল্লাহ্‌র ইবাদত করলে এবং নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত না মানলে বা নবী (সা.) কে অস্বীকার করলে আমরা মুসলিম হতে পারবো না। আমরা নামাজ আদায় করার সময় অনেক ফরজ এবং ওয়াজিব পালন করি। তেমনি, নামাজের মাঝে এমন কিছু সুন্নত রয়েছে, যা পালন করা উচিত।

অনেকেই নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি এবং নামাজের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কয়টি জানেন না। তাই, আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে সাথে নামাজের সুন্নত সমূহ নিয়ে আলোচনা করবো। তো চলুন, পোস্টে মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।

নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি?

নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি
নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি

নামাজের মাঝে মোট ২১টি সুন্নত রয়েছে। নামাজ আদায় করার সময় এসব সুন্নত পালন করা উচিত। সুন্নতগুলো পালন না করলে নামাজ হবে না বা সাহু সিজদা দিতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। তবে, আমাদের সকলের উচিত নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদায় করা এসব সুন্ননত আদায় করা উচিত।

নামাজের সুন্নত ২১ টি তা তো জানা হয়েছে। তো চলুন, দেখে নেয়া যাক এই সুন্নতগুলো কি কি।

১. তাকবীরে তাহারীমা বলার আগে পুরুষের কানের নিম্নভাগ পর্যন্ত এবং নারীর কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত উঠানো। ওজর বশত : পুরুষ কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত উঠালে সহীহ হবে।

২. তাকবীরে তাহরীমা আল্লাহু আকবার বলার সময় দু’হাতের আঙুলগুলো খুলে রাখা এবং দুই হাতুলি এবং আঙুলগুলো কেবলামুখী করা।

৩. তাকবীরে তাহরীমা বলার পরক্ষণেই পুরুষের নাভির ওপরে এবং মেয়েদের বুকের ওপরে হাত বাঁধা। হাত বাঁধার মাসনূন তরীকা এই যে, ডান হাতের হাতুলি বাম হাতের হাতুলির পিঠের ওপর রাখবে এবং ডান হাতের বুড়ো আঙুল এবং ছোট আঙুল দিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরবে। আর বাকী তিন আঙুল বাম হাতের ওপর বিছিয়ে রাখবে। এ তরীকা নারী পুরুষ উভয়ের জন্য । অবশ্য দুই আঙুল দিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরা নারীদের জন্য সুন্নাত নয়।

আরও পড়ুন – নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি? নামাজের ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয়

৪. তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় মস্তক অবনত না করা।

৫. ইমামের জন্য তাকবীর তাহরীমা এবং এক রুকন থেকে অন্য রুকনে যাবার সময় তাকবীর জোরে বলা।

৬. সানা পড়া । অর্থাৎ ‘সুবহানাকাল্লাহুমা’ শেষ পর্যন্ত পড়া।

৭. اعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطِنِ الرَّحِيمِ পড়া।

৮. প্রত্যেক রাকায়াতে সূরা ফাতেহার পূর্বে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ টা পড়া।

৯. ফরয নামাযের তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকায়াতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পড়া।

১০. আমীন বলা । ইমামও আমীন বলবে এবং একাকী নামায পাঠকারীও আমীন বলবে। যেসব নামাযে উচ্চস্বরে কেরাত পড়বে তাতে সূরা ফাতিহা শেষ হওয়ার পর সকল মুক্তাদী আমীন বলবে।

১১. সানা, আউযুবিল্লাহ’ বিসমিল্লাহ এবং আমীন পড়বে।

১২. কিরায়াতে মাসনূন তরীকা অনুসরণ করা। যে যে নামাযে যতখানি কুরআন পড়া সুন্নাত সে মুতাবেক পড়া।

১৩. রুকূ’ এবং সিজদায় অন্ততপক্ষে তিনবার তাসবীহ পড়া। অর্থাৎ রুকূ’তে سُبْحَانَ رَبِيَ الْعَظِيمِ এবং সিজদায় سُبْحَانَ رَبِّي الأعلى পড়া।

১৪. রুকূ’তে মাথা এবং কোমর সটান সোজা রাখা এবং দু’হাতের আঙুল দিয়ে উভয় হাঁটু ধরা।

১৫. কাওমার (রুকূ’ থেকে উঠে দাঁড়ানো অবস্থায়) ইমামের سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حمده বলা এবং মুক্তাদীর ربنا لك الحمده বলা।

১৬. সিজদায় যাবার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর দু’হাত, তারপর নাক এবং তারপর কপাল রাখা।

১৭. জলসা এবং কা’দায় বাম পা বিছিয়ে তার ওপর বসা এবং ডান পা এমনভাবে খাড়া রাখা যেন আঙুলগুলোর মাথা কেবলার দিকে থাকে। দু’হাত হাঁটুর ওপর রাখা।

১৮. আত্তাহিয়্যাতুতে ‘লা-ইলাহা’ বলার সময় শাহাদাত আংগুলি দ্বারা ইশারা করা।

১৯. শেষ কা’দায় আত্তাহিয়্যাতুর পর দরুদ পড়া।

২০. দরুদের পর কোনো মাসনূন দোয়া পড়া।

২১. প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম ফিরানো।

সহিহভাবে এবং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখানো নামাজ আদায় করতে চাইলে আমাদের সবার উচিত নামাজের এই ২১টি সুন্নত পালন করা। নামাজের সুন্নত পালন না করলে বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছুটে গেলে আবারও নামাজ আদায় বা সাহু সিজদা করতে হবে না। তাই বলে নামাজের মাঝের এসব সুন্নত আদায় করতে অবহেলা করা উচিত নয়।

আরও পড়ুন – নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি? নামাজের ফরজ ছুটে গেলে কি করতে হবে জানুন

নামাজের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কয়টি ও কি কি?

নামাজের মাঝে ১২টি সুন্নতে মুয়াক্কাদা রয়েছে। এসব সুন্নাতে মুয়াক্কাদা অবশ্যই পালন করা উচিত। আদায় না করলে নামাজ হবে। সাহু সিজদা দিতে হবে না। তবে, আমাদের উচিত এসব সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায় করা। নামাজের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কয়টি ও কি কি তার তালিকা নিচে পেয়ে যাবেন।

  1. দুই হাত উঠানো
  2. দুই হাত বাধা।
  3. ছানা পড়া।
  4. আউযুবিল্লাহ পড়া।
  5. বিসমিল্লাহ পড়া।
  6. সূরা ফাতিহার পর আমিন বলা।
  7. প্রত্যেক উঠা বসার সময় আল্লাহু আকবার বলা।
  8. রুকুর তাসবীহ বলা।
  9. রুকু থেকে উঠার “সময় সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ – রব্বানা লাকাল হামদ্” বলা ।
  10. সিজদার তাসবীহ পড়া।
  11. দরুদ শরীফ পড়া।
  12. দোয়ায়ে মাসুরা পড়া।

সুন্নাতে মুয়াক্কাদাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন যে ব্যক্তি আমার একটা সুন্নাত মজ্বুত ভাবে আকড়ে ধরে (আমল করে) আমার উম্মতের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি হওয়ার পর (আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে) তাহলে তাকে ১০০ শহীদের সওয়াব দেওয়া হবে। সুতরাং আসুন আমরা সুন্নাত গুরুত্ব সহকারে আদায় করি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।

আমাদের শেষ কথা

ফেরদাউস একাডেমির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। অনেকেই সুন্নত সম্পর্কে অবগত নন। তাই, আশা রাখছি এই পোস্টে উল্লিখিত নামাজের ২১ টি সুন্নাত জানতে পেরেছেন। এছাড়াও, নামাজের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কয়টি ও কি কি এই বিষয় তুলে ধরেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পরে থাকলে এখন থেকে সুন্নাত এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদাগুলো আদায় করবেন বলে আশা করছি। এমন আরও ইসলামিক পোস্ট পড়তে প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আল্লাহ্‌ হাফেয।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment