ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম

আকিকা করার সময় ছাগল বা দুম্বা দিয়ে আকিকা করা হাদিস সম্মত। তাই, ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম জানার জন্য অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন। আপনিও যদি ছাগল দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম জানতে চান এবং আপনার সন্তানের আকিকা ছাগল বা খাসি দিয়ে করতে চান, তবে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম, ছাগল দিয়ে আকিকা করার নিয়ম, বকরি দিয়ে আকিকা করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো চলুন, শুরু করা যাক।

আকিকা কি?

সন্তান জন্মের ৭ দিন পর সন্তানের মঙ্গল কামনা করে সন্তানের পিতা-মাতা হালাল পশু কুরবানি করে থাকে, সন্তানের ইসলামিক নাম রাখে এবং মাথার চুল মুণ্ডন করে থাকে। এটাই হচ্ছে আকিকা। আকিকা করা পিতা-মাতার কর্তব্য। এছাড়াও, প্রতিটি সন্তান এর আকিকার অধিকার রয়েছে। শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন যেন সুন্দর হয় সে কামনা করে আকিকা করতে হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও আকিকা করেছেন। সন্তান জন্ম নিলে আমাদেরও উচিত আকিকা করা।

আকিকা দেওয়ার নিয়ম

আকিকা প্রতিটি শিশুর জন্য অধিকার। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও আকিকা করেছেন। আকিকা করার জন্য ৩টি কাজ করতে হয়। এগুলো হচ্ছে – হালাল পশু কুরবানি করা, সন্তানের ইসলামিক নাম রাখা এবং মাথার চুল মুণ্ডন করে দেয়া। আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই তেমন অবগত নন। আকিকার জন্য কোন পশু কুরবানি করতে হবে এমন অনেক প্রশ্ন করে থাকেন অনেকে।

আপনি যদি আপনার সন্তানের আকিকা করতে চান, তবে ছাগল কিংবা দুম্বা কুরবানি করে আকিকা করতে পারেন। হাদিসে রয়েছে, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে আকিকা করেছেন এবং ছাগল কিংবা দুম্বা কুরবানি করে আকিকা করতে বলেছেন। ছেলেদের আকিকা করার ক্ষেত্রে ২টি পশু এবং মেয়েদের আকিকা করার ক্ষেত্রে ১টি পশু কুরবানি করতে হবে।

অনেকেই গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম এবং ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম জানতে চান। ইতোমধ্যে একটি পোস্টে গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি চাইলে সেটি পড়ে আসতে পারেন। এখন চলুন, ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম

ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম
ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম

আকিকা করার সময় ছেলে সন্তান এর জন্য দুইটি পশু এবং মেয়ে সন্তান এর জন্য একটি পশু কুরবানি করতে হয়। আপনার যদি ছেলে সন্তান জন্ম নিয়ে থাকে, তবে তার জন্মের ৭/১৪/২১ কিংবা যেকোনো দিন আকিকা করার জন্য দুটি পশু কুরবানি করতে হবে। কুরবানি করার জন্য ছাগল কিংবা দুম্বা বেঁছে নিতে পারেন। অনেকেই গরু দিয়ে আকিকা করার কথা বলে থাকেন। তবে, সহিহ হাদিসে কোথাও উল্লেখ করা নেই যে, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা তার সাহাবীগণ গরু দিয়ে আকিকা করেছেন।

অনেক মাওলানা বলে থাকেন যে, গরু দিয়ে আকিকা হবে। যে বিষয়টি হাদিসে উল্লেখ করা নেই, সেটি না করাই উত্তম। যেখানে গরু দিয়ে আকিকা করার কথা হাদিসে উল্লেখ করা নেই, সেখানে মানুষ কোরবানির গরু দিয়ে আকিকা করতে চায় যেটি কখনোই জায়েজ বলে গন্য হবে না।

এক্ষেত্রে আপনি ছাগল বেঁছে নিতে পারেন। আমাদের দেশে ছাগল সহজেই পাওয়া যায়, তাই আপনি ছাগল দিয়ে ছেলে সন্তানের জন্য দুটি এবং মেয়ে সন্তানের জন্য একটি কুরবানি করতে পারেন।

ছাগল দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম

কুরবানি করার ক্ষেত্রে কিংবা আকিকা করার জন্য কুরবানি করার জন্য অবশ্যই সুস্থ পশু নির্বাচন করতে হবে। ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম অনুযায়ী আপনি যদি আপনার সন্তানের আকিকায় ছাগল কুরবানি করতে চান, তবে সুস্থ দেখে ছাগল ক্রয় করে আনতে হবে। এরপর, সন্তানের মাথা মুণ্ডন করা, সুন্দর ইসলামিক নাম রাখা এবং ছাগল কুরবানি করতে হবে। অনেকেই বিভিন্ন কুসংস্কার ছড়িয়ে থাকেন যে, সন্তানের মাথা মুণ্ডন করার সময় খুর মাথায় রাখা অবস্থায় কুরবানি করতে হবে, আসলে এসব কুসংস্কার এবং বিশ্বাস করা যাবে না।

আকিকা করার হয় সন্তানের মঙ্গল কামনা করার জন্য এবং আল্লাহ্‌র কাছে শুকরিয়া আদায় করার জন্য। ছাগল দিয়ে আকিকা করার জন্য ছাগল কুরবানি করতে হবে, এরপর ছাগল এর মাংস কুরবানির মাংসের মতো করে তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। শুধু নিজের ভোগের কথা না ভেবে সমস্ত মাংস তিন ভাগ করে একভাগ নিজের পরিবারের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং আরেক ভাগ মাংস গরিব-মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে।

সন্তানের ইসলামিক নাম রাখা

আকিকা করার প্রধান ৩টি কাজের মাঝে পশু কুরবানি করা নিয়ে তো উপরে আলোচনা করলাম। এছাড়াও, সন্তানের জন্য সুন্দর ইসলামিক নাম রাখা আকিকার একটি অবিচ্ছ্যেদ্য অংশ। নাম রাখার জন্য কুরআন কিংবা হাদিস থেকে সন্তানের জন্য অর্থবহুল নাম খুঁজে বের করে সেটি রাখতে হবে। এতে করে আল্লাহ্‌ রহমত করলে এবং পিতা-মাতার নিয়ন্ত্রনে সন্তান ইসলামের পথে চলবে।

মাথা মুণ্ডন করে দেয়া

সন্তানের মঙ্গল কামনা করার জন্য কিংবা আল্লাহ্‌র কাছে সন্তানের জন্য শুকরিয়া আদায় করার জন্যই হোক, আকিকা করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি সন্তানের আকিকার অধিকার রয়েছে। পিতা-মাতা হিসেবে আকিকা করা এবং আকিকার সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা দায়িত্ব। পশু কুরবানি করা এবং সুন্দর ইসলামিক নাম রাখার মাঝেই আকিকার কাজ সিমাবদ্ধ নয়। সন্তানের মাথার চুল আকিকা করার সময় মুণ্ডন করে দিতে হয়।

মাথার চুল মুণ্ডন করে দেয়া, সুন্দর ইসলামিক নাম রাখা এবং হালাল, সুস্থ পশু কুরবানি করা আকিকার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তো চলুন, ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন এবং সেগুলোর উত্তরগুলো দেখে নেয়া যাক।

ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম – FAQ

ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম কি?

আপনি যদি আপনার ছেলে সন্তান এর আকিকা করতে চান ছাগল দিয়ে, তবে ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম অনুসারে দুইটি ছাগল কুরবানি করার মাধ্যমে আকিকা সম্পন্ন করতে পারবেন। ছাগল একটি হালাল পশু। তাই, সুস্থ ছাগল দিয়ে আকিকা করা জায়েজ আছে।

বকরি দিয়ে আকিকা হবে?

বকরি বা ছাগল একই কথা। আঞ্চলিক ভাষায় ছাগলকে বকরি বলা হয়ে থাকে। বকরি দিয়ে আকিকা করা যাবে। হাদিসে ছাগল বা দুম্বা দিয়ে কুরবানি করার কথা উল্লেখ করা আছে। তাই, আকিকা করার সময় সুস্থ ছাগল কুরবানি করার মাধ্যমে আকিকা করা যাবে।

আকিকার জন্য ছাগলের বয়স কত হতে হবে?

আকিকা করার জন্য ছাগল বাছাই করে থাকলে আপনি যেকোনো ছাগল কুরবানি করার মাধ্যমে আকিকা করতে পারবেন। তবে, এক্ষেত্রে অবশ্যই সুস্থ এবং মাঝারি বয়সের ছাগল বাছাই করবেন। এতে করে একদিকে যেমন আকিকার প্রধান কাজ কুরবানি হবে তেমনি অপরদিকে নিজ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং গরিব-মিসকিনের মাঝে আকিকার কুরবানির মাংসের অংশ বিলিয়ে দেয়া যাবে।

মেয়ে ছাগল দিয়ে কি আকিকা হবে?

ছাগল মেয়ে হোক কিংবা ছেলে হোক, সেটি দিয়ে যেমন কুরবানি হবে তেমনি আকিকাও হবে। আকিকা করার জন্য পশু কুরবানি করতে হয়। আকিকায় ছাগল কুরবানি করতে চাইলে যেকোনো বয়সের মেয়ে ছাগল কিংবা ছেলে ছাগল দিয়েও কুরবানি করা যাবে।

ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম- শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনি যদি ছাগল দিয়ে আকিকা করতে চান এবং ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট এসে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে এই অব্দি এসে থাকেন, তবে পোস্ট সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

আরও পড়ুন: 

গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম
মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন:

Leave a Comment